অপপ্রচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা আইপিটিভির প্রতিনিধি হওয়ার জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হত বলে জানিয়েছে র্যাব।
Published : 03 Aug 2021, 05:33 PM
হেলেনার দুই ‘সহযোগীকে’ গ্রেপ্তার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার র্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
এই দুজন হলেন হেলেনার জয়যাত্রা আইপিটিভির জিএম (অ্যাডমিন) হাজেরা খাতুন (৪০) এবং প্রতিনিধি সমন্বয়ক সানাউল্ল্যাহ নূরী (৪৭)। সোমবার রাতে গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তাদের দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীরের প্রতারণা কার্যক্রমে জড়িত বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে।”
এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসনের পাশাপাশি তিনি নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিতেন।
আওয়ামী লীগে পদ হারানো এই ব্যবসায়ীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেখান থেকে মাদক ও ক্যাসিনোর সামগ্রী উদ্ধার করার কথাও র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়।
ইতোমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাদক আইন, চাঁদাবাজির অভিযোগ এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে চারটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কারওয়ানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, হংকং থেকে ডাউনলিংক নিয়ে জয়যাত্রা আইপিটিভির কার্যক্রম চালানো হত।
“হাজেরা খাতুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ২০১৮ সাল থেকে এভাবে চলছিল। তরঙ্গের জন্য প্রতি মাসে হংকংয়ে ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হত।”
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার হাজেরা জয়যাত্রার কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘নিকট আত্মীয়’। দক্ষতার গুণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে তিনি জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম হিসেবে নিয়োগ পান। জয়যাত্রা আইপিটিভির জিএম (অ্যাডমিন) হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম ও আর্থিক বিষয় তিনি দেখতেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, “সম্প্রচারের জন্য কেবল ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জয়যাত্রা আইপিটিভির রিসিভার সরবরাহ করা হত। প্রতিনিধিরা কেবল সংযোগের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুত করা হত।”
হাজেরার বরাত দিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় জয়যাত্রা আইপিটিভির সম্প্রচার হচ্ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিধি নিয়োগের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হত।
“গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রতিনিধি হতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি হতে ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা দিতে হতো। এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হত।
“এই টিভি বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচার হত। ১ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিদেশে প্রতিনিধিরা নিয়োগ পেতেন।”
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, সানাউল্ল্যাহ নুরী ছিলেন জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক। হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় তিনি প্রতিনিধিদের মধ্যে যোগাযোগের কাজটি করতেন।
“প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন,” বলেন তিনি।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হাজেরা ও সানাউল্ল্যাহ বলেছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের অধীনে যারা চাকরি করতেন, তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনাতেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামের আগে ‘সিস্টার’ সম্বোধন করতে হত।
কেউ ‘সিস্টার হেলেনা’ না বললে ‘চাকরিতে নানা ধরনের সমস্যা’ হত বলে গ্রেপ্তার দুজন জানিয়েছেন র্যাবকে।