জলবায়ু তহবিল ছাড়ে উন্নত দেশগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান 

জলবায়ু ক্ষতি কাটাতে অর্থায়নে প্রতিশ্রুত তহবিল ছাড় করতে উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 03:02 PM
Updated : 8 July 2021, 05:05 PM

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ‘ভি২০ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিট’ উদ্বোধন করে এই আহ্বান জানান।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।

কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নের জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে যে ঐকমত্য এসেছিল, তা ছাড় করার উপর আমরা নির্ভর করছি। একই সাথে ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা অনুযায়ী কপ ২৬ ও সিভিএফের একটি যৌথ প্রকল্প নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় পাঁচটি প্রস্তাবও সম্মেলনে দেন শেখ হাসিনা।

এগুলো হলো, ১. বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বছরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্রতিটি দেশেরই গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে লক্ষ্যমাত্রা আবশ্যিকভাবে নির্ধারণ।

২. সিভিএফ-ভি২০ দেশগুলোর সবুজ পুনরুদ্ধারে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো।

৩. তহবিল ছাড় ক্রমবর্ধমনভাবে বাড়ানো। উন্নয়ন সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল বরাদ্দ ও ছাড়ে একটি সহজ প্রক্রিয়া গ্রহণ।

৪. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ থেকে রক্ষায় সিভিএফ-ভি২০ রাষ্ট্রগুলোকে ধনী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা বাড়ানো।

৫. ঝুঁকিতে থাকা সব দেশই ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’র মতো ‘জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।

জলবায়ু ক্ষতি কাটানোর অর্থায়নে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থমন্ত্রী, উন্নয়ন সহযোগী, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, “আমাদের নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।  

“সিভিএফ-ভি২০ভুক্ত ৪৮টি দেশে বৈশ্বিক দূষণের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য দায়ী। কিন্তু তারাই এই মানবসৃষ্ট সঙ্কটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।”

কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে বিশ্বের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের জনগণের ঝুঁকি, আমাদের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা, প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড ১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবেলায় অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন এবং নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করা উচিৎ।”

জলবায়ু ক্ষতি শিকার হওয়ার পরও তা মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেওয়া নানা উদ্যোগও সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “২০২০ সালের জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭। কোভিড ১৯ মহামারী এবং দীর্ঘায়িত বন্যা ও অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান ২০২০ সালে বাংলাদেশে অনেক প্রাণহানি ও লাখো মানুষের জীবণ-জীবিকায় আঘাত করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলা এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজন ও প্রশমনে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজন ও সহনশীলতা তৈরিতে প্রতিবছর আমরা ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করছি, যা আমাদের জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সারাদেশে সবুজায়নের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছর আমরা সারাদেশে ৩০ মিলিয়ন গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছি। নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আমার সরকার বঙ্গবন্ধু ডেলটা পরিকল্পনা ২১০০ তৈরি করেছে।

“জাতিসংয়ের আওতায় সিভিএফ এবং ভি২০ যৌথ বহুদাতা তহবিলের আমরা প্রতিষ্ঠাতা দাতাদের অন্যতম। ১৩৯টি বহুতল ভবনে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।”