ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শতবর্ষে সংগ্রামে উজ্জ্বল, গবেষণায় ম্লান

আধুনিক উচ্চশিক্ষায় বাঙালি মধ্যবিত্তের বিকাশ, শিক্ষিত জাতি গঠন ও স্বাধিকার আন্দোলনে গৌরবময় সৌরভ ছড়িয়ে শতবর্ষ পূর্ণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাসেল সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2021, 05:41 PM
Updated : 30 June 2021, 06:20 PM

ঔপনিবেশিক আমলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ঘটনার আবর্তে ১৯২১ সালের ১ জুলাই রমনার সবুজ প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সূতিকাগারের মতো ভূমিকা রাখলেও উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে জাতিকে তেমন কিছু দিতে পারেনি শতবর্ষী এ বিদ্যাপীঠ।

স্বায়ত্তশাসন অটুট রেখে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী- কোনোকালেই শাসকদের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষা ও সমাজ- দুটি প্রেক্ষিত থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। শাসকের সঙ্গে লড়াই করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে টিকে থাকতে হয়েছে।

“দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেলেও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায়নি। যে সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুণগত শিক্ষা ও গবেষণায় ঋদ্ধ হওয়ার কথা, সেটা রাষ্ট্র সুযোগ করে দিতে পারেনি।”

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন শাসকদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাধীনতাপূর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কমবেশি ‘ভালোই ছিল’। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষ করে পঁচাত্তরের পরে তাতে ধস নামে, যা এখনও চলছে।

“স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ভালোই। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান চর্চায় পরিপূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অপকর্ম হয়েছে, আগে অন্য দুটি আমলে তা হয়নি।”

শতবর্ষ উদযাপনে আলোকজ্জ্বল কলা ভবন।

রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য পদে নিয়োগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গৌরবময় ঐতিহ্য’ ধ্বংস করছে বলে মনে করছেন ইতিহাসের এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক আমলে, এমনকি পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন জ্ঞানে-পাণ্ডিত্যে অগ্রণী ব্যক্তি। এখন তো ‘পরিপূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়’ উপাচার্য নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হয়।

“শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকিস্তান আমলের মতো সরকারের একেকটি বিভাগ মনে করা হয় এবং সেই হিসেবে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।”

আনোয়ার হোসেন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের গৌরব ঢাকা পড়েছে অর্থাৎ জ্ঞানে-বিজ্ঞান এখন ঢাকা পড়ে আছে। এটাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।

“তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগটি রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। উপাচার্য নিয়োগ হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সেই সার্চ কমিটি রাজনৈতিক বিবেচনায় হবে না। জ্ঞান-পাণ্ডিত্য,  মেধা-মননের উপর ভিত্তি করে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।”

তবে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও এর বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশ্নকে খুব বড় করে দেখছেন না জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “জাতির যা আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার চেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে।”

শতবর্ষ উদযাপনে আলোকসজ্জিত কার্জন হল।

ঔপনিবেশিক আমলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দীতে ‘ক্ষুদ্র স্বার্থের’ রাজনীতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান।

তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি সবসময় ছিল। তবে একটা সময় সেই রাজনীতি ছিল বৃহত্তর স্বার্থে, দেশ ও জাতির জন্য ছিল সেই রাজনীতি। এখন ছাত্র-শিক্ষকরা ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করছে, দলীয় আধিপত্য বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করছে।

“এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুতি।”

স্বাধীনতার আগে ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, “জাতি গঠনে, সমাজ পরিবর্তনে, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা রেখেছিল, স্বাধীনতার পর তা কিছুটা কমে গেছে।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আগের মতো উদার মানসিকতা, সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক বৈষম্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য আগে যেমন ভূমিকা রাখত, সেটা অনেক কমে গেছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে উচ্ছ্বসিত গ্রাজুয়েটরা। ফাইল ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শতাব্দীকে সামনে রেখে গবেষণার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানালেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

“সেই কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অগ্রসর হব এবং তা বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিক সদয় সহায়তা প্রত্যাশা করছি।”

শতবছরের পথপরিক্রমা

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ রদের ‘রাজকীয় ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে, যেটাকে লর্ড লিটন ‘স্প্লেনডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন’ বলেছিলেন।

সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯২১ সালের ১ জুলাই মাসে তিনটি আবাসিক হল ও ৩টি অনুষদের অধীনে (বিজ্ঞান, কলা ও আইন) ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রাবাস সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।

যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন- হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ১৯৬১ সালের আইয়ুব সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। সেই অর্ডিন্যান্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে বদলে দেয় এবং আরও প্রত্যক্ষভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

একপর্যায়ে মাতৃভাষার দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরশাসক আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।

ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩ জারি করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে এবং পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১৩টি অনুষদ, ৮৪টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ১৯৮৬জন শিক্ষক, প্রায় ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও আছে দেড় শতাধিক অধিভুক্ত বা উপাদানকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিও রঙিন শতবর্ষ উদযাপনে।

কলেবরে ও পরিসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় হলেও গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার মান, উদ্ভাবন, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা, বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে নেই বললেই চলে।

সর্বশেষ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র‌্যাংকিং অনুযায়ী, বিশ্বের ১ হাজার ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে। ২০১২ সালেও ৬০১ তম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগোপযোগী করতে প্রথমবারের মতো একটি ‘মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উৎকর্ষ অর্জনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসিক চাহিদা মেটানো, আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি সুবিধা, পার্কিং সুবিধাসহ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংসহ জলাধার সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ সংরক্ষণ, আধুনিক জিমনেসিয়াম নির্মাণ, মানসম্মত মেডিকেল সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়।

লকডাউনে সুনসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি। ফাইল ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

শতবর্ষ যাপনে মহামারী ঘা

বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শতবর্ষ উদযাপন ও প্রাক্তনদের মিলনমেলায় বাধা হয়ে দাঁড়াল অদৃশ্য এক ভাইরাস।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠান পেছানো হয়েছে। ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

১ জুলাই সীমিত পরিসরে অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হবে। অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচিতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে মূল বক্তা থাকবেন ভাষাসৈনিক, কলামনিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ : ফিরে দেখা' শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।

মহামারীর কারণে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, টিএসসি ও কার্জন হলে আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে।

শতবর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের’ নানা পরিকল্পনা থাকলেও দেশে লকডাউনের কারণে একদিন আগে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ফ্লোরে সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছে।

শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এক শুভেচ্ছাবাণীতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে প্রিয় মাতৃভূমি ও গণমানুষের প্রতি আমাদের অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চিরগৌরবময় মুক্তিযুদ্ধসহ গণমানুষের সকল লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা নেতৃত্ব দিয়েছে। জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং দেশ সেবায় রেখেছে অনন্য অবদান।

“মহান এ বিদ্যাপীঠের স্বনামধন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ (মুজিব বর্ষ), মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের বিরল সৌভাগ্য-প্রাপ্তির ক্ষণে আমরা দেশের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে আরও উন্নত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”