রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের ‘স্পষ্ট রোডম্যাপ’ চায় বাংলাদেশ

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘকে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2021, 06:48 AM
Updated : 17 June 2021, 07:19 AM

বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ দাবি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জে ওই বৈঠকে তিনি বলেন, “মানবিক বিবেচনায় আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি; তবে এই সঙ্কটটির সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপর, যা গত চার বছরে সম্ভব হয়নি।

“আমরা চাই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘ স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরি করুক।”

গত কয়েক দশকে মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে ছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে আরও সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার ঢল বাংলাদেশ আসে।

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে ২০১৯ সালে দুদফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ না থাকার কথা তুলে ফিরতে রাজি হয়নি এই শরণার্থীরা।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার বিরান দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের এই পরিকল্পনা নেয় সরকার।

কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে গত ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৯০ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দীর্ঘসময় ধরে অবস্থানের নেতিবাচক দিক, বিশেষ করে ঐ এলাকায় বসবাসরত মূল জনগোষ্ঠীর উপর এর বিরূপ প্রভাবের কথা বুধবারের বৈঠকে বিশেষ দূতের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

ভাসানচর প্রকল্পের কথা অবহিত করে তিনি বলেন, এখানে রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ যাতে ভাসানচরে মানবিক সহায়তা প্রদান করে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত বার্গনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এবং ‘অচিরেই’ যাতে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করা যায়, সেজন্য জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রসহ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়া ভাসানচর পরিদর্শন করতে আগ্রহের কথাও জানান বিশেষ দূত বার্গনার।

পরে জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার সঙ্গেও ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকগুলোতে অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা অংশ নেন।