রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে ডিআরইউর সমাবেশ

মামলা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2021, 11:24 AM
Updated : 19 May 2021, 11:24 AM

বুধবার ডিআরইউর এক সমাবেশ থেকে সচিবালয়ে রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তায় জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়।

দুপুরে ডিআরইউ চত্বরের এই সভায় এ সমাবেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান।

সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ তুলে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনাকে।

পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।ওই মামলায় এই সাংবাদিক এখন কারাগারে।

রোজিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকার প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিআরইউও প্রতিবাদ সমাবেশ করল।

সমাবেশে সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা দেখেছি কীভাবে আমাদের বোন রোজিনা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের চোখের সামনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন, তবুও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই করতে পারিনাই। আমরা অসহায় ছিলাম।

“আমরা রোজিনা আপার নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

টেলিকম রিপোর্টার্স, বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, “রোজিনা ইসলাম জেলে আছেন মানে আমরা সব সাংবাদিক জেলে আছি। আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশ দেখি নাই, পাকিস্তান উপনিবেশ দেখি নাই, কিন্তু বাংলাদেশে এখন আমরা প্রশাসন ক্যাডারের উপনিবেশ দেখছি।”

ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাশহুদুল হক বলেন, “যে আইনে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সামান্যতম ন্যায়বিচার হলেও তার জামিন সম্ভব। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

“স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তারা রোজিনাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করেছেন, অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি নাদিরা কিরণ বলেন, “রোজিনার উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে সাংবাদিকদের উপরই নির্যাতনের শামিল। শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আন্দোলনকে চালিয়ে রাখা যাবে না। তার শুধু জামিনই নয়, বরং নিঃশর্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”

ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান বলেন, “এটি কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নয়, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের তথ্য অধিকারের বিষয়টিকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।।”

গ্রেপ্তার রোজিনা ইসলাম। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিন আল রশিদ বলেন, “অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে যে মামলা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হতে পারে না।

“এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশের কোনো সরকারি অফিসের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া যাবে না। এই মামলার অর্থই হলো বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বলে কিছু থাকবে না।”

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, “তথ্য গ্রহণ করা মানেই তথ্য চুরি নয়। রোজিনা যে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ক্রসচেকের উদ্দেশ্যেই সেখানে গিয়েছেন।

“বৃহস্পতিবার আদালতে জামিনের শুনানি হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।”

রোজিনার বিরুদ্ধে যে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।

তারা বলেন, রোজিনাকে ‘শারীরিক নির্যাতনকারী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করা উচিৎ।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তার উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যান।