‘ওষুধ প্রতিরোধী’ জীবাণু আনবে আরও বড় বিপদ: প্রধানমন্ত্রী

জীবাণুর ‘ওষুধ প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠা ঠেকানো না গেলে বিষয়টি যে করোনাভাইরাস মহামারীর চেয়েও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2021, 03:01 PM
Updated : 4 May 2021, 05:19 PM

আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাতটি পদক্ষেপে জোর দিতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (এএমআর) বিষয়ে ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ’ এর দ্বিতীয় সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সঙ্কট, যা এরই মধ্যে ত্রিশ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

“তবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স মহামারীর আকার নিলে তা পুরো বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের আরও বড় ক্ষতি করবে। এটা কেবল মানুষ, পশুপাখি আর উদ্ভিদকে বিপদে ফেলবে না, খাদ্য নিরাপত্তা এবং এসডিজি অর্জনের পথেও হুমকি তৈরি করবে।”

বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটোলির সঙ্গে গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’ এর হুমকি মোকাবেলা এবং একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

এই গ্রুপের উদ্বোধনী সভার পাশাপাশি গত সপ্তাহে সাধারণ পরিষদের বৈঠকে কিছু পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন এএমআর মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।”

মঙ্গলবারও নতুন কিছু বিষয়ে তিনি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেগুলোতে নজর দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

১. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স কনটেইনমেন্টের (এআরসি) লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যপ্রদান ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

২. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা পরজীবী প্রতিরোধী ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের নীতিমালা এবং নীতি কাঠামো গড়ে তোলা।

৩. এএমআর বিষয়ে কার্যকর নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জ্ঞান ও প্রযুক্তি সহায়তা বিনিময়।

৪. প্রযুক্তি বিনিময় ও মালিকানা ভাগাভাগির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

৫. এএমআর নিয়ন্ত্রণে যথাযথ মনোযোগ ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে পর্যাপ্ত ও টেকসই অর্থায়ন।

৬. এএমআর প্রতিরোধে বিনিয়োগের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব।

৭. অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো গড়ে তোলা।

ডব্লিউএইচও, এফএও এবং ওআইই জীবাণুর ‘ওষুধ প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠার বিপদ ঠেকাতে বিস্তৃত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে কৌশল নির্ধারণের কাজ করছে, তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে এ বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কনটেইনমেন্ট-এআরসি সম্পর্কিত ছয় বছর মেয়াদী জাতীয় কৌশলপত্র এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। এই পরিকল্পনাগুলোর লক্ষ্য মানব স্বাস্থ্য, গবাদি পশু, মৎস্য ও কৃষি খাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

“ আমরা ২০১৯ সাল থেকে ডব্লিউএইচও গ্লাস প্ল্যাটফর্মে এএমআর ডেটা সরবরাহ করছি। এছাড়া, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স সম্পর্কে গণমানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আমরা গণমাধ্যমকেও সম্পৃক্ত করছি।”

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স যে ভৌগলিক অবস্থান এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সবাইকে ভোগাবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেজন্য সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এএমআর নিয়ে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এএমআর নিয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত পলিটিক্যাল ডিক্লারেশরন এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি সম্ভব “