মেলার শেষ দিন সোমবার আগের চেয়ে অবশ্য ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগত একটু বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন স্টলের কর্মীরা।
বিকালের ভাগে অনেকেই এসেছিলেন। তবে বই কেনার চেয়ে তারা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে জানান বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলের বিক্রয় কর্মীরা।
সচরাচর শেষ দিনে বিক্রির যে হিড়িক থাকে, তা সোমবার ছিল না। আগের কয়েকদিনের মত বিক্রিবাট্টা নেই বললেই চলে।
এমন ভাঙা হাটের মধ্যে সোমবার বিকেল ৫টা বাজতেই স্টল-প্যাভিলিয়ন গুটিয়ে ফেলার ঘোষণা আসে মেলার তথ্যকেন্দ্রের মাইক থেকে।
ঘোষণায় বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে কঠোর ‘লকডাউন’। এর আগেই সব স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয় সবাইকে।
ক্রেতা-দর্শনাথীদের দেখা না পাওয়ায় গত কয়েক দিনে খরচ বাঁচাতে ১০/১৫টি স্টল আগেই গুটিয়ে নিয়ে চলে যায়। আর স্থান পরিবর্তন ইস্যুতে মনোমালিন্যের জের ধরে লিটল ম্যাগ চত্বরও খালি হয়ে গেছে দিন কয়েক আগেই।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার সীমিত পরিসরের এবারের মেলার পর্দা নামার সময় ঘনিয়ে আসে।
প্রতিবছর সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে মেলা শেষ হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ছিল না সেই আয়োজন।
এমনকি মেলার সেরা বই ও স্টল সজ্জাসহ বিভিন্ন পুরস্কারের বিষয় পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানোর কথা বলেছে বাংলা একাডেমি।
তবে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
সেরা তিন প্রতিষ্ঠান হলো যথাক্রমে উড়কি (স্টল নম্বর-৪৩), সংবেদ (স্টল নম্বর-১৮৯, ১৯০) ও কথাপ্রকাশ (প্যাভেলিয়ন-২০)।
এবার মেলায় প্রকাশিত মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা ২৬৪০টি। গত বছর মেলায় মোট ৪ হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশিত হয়েছিল।
গত বছর বাংলা একাডেমি ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই বিক্রি করলে এবার মাত্র ৫০ লাখ টাকার মতো বই বিক্রি করেছে।
এসব বিষয়ে বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,"বাংলা একাডেমির বই বিক্রির হিসাবটা কাছে আছে। তবে প্রকাশকদের হিসাবটা আমাদের কাছে আসেনি। এবার আমরা ৫০ লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি।"
"বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধু সিরিজের উপর এবার ৩৫টি বই প্রকাশ করেছে। এবার সর্বমোট নতুন বই ২৬৪০টি হলেও মানসম্মত বই ছিল ৬৩৫টি।"
বিভিন্ন প্রকাশনার সর্বমোট বই বিক্রির তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির মহাসচির ও অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মো. মনিরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,"এবার মোট হিসাবটা পাইনি।মেলায় বই বিক্রি খুবই কম হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার ১০ শতাংশের বেশি হবে না।"
নিজেদের প্যাভিলিয়নের বিক্রির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন,"এবার আমাদের বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭ লাখ টাকা। গতবার যেটা ছিল ৮০ লাখ টাকা। এবার গতবারের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এটা আসলে ধারাবাহিকতা রক্ষার মেলা হিসেবেই দেখতে হবে আমাদের।
প্রতিবছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশে বইমেলা হয়ে এলেও এবার মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে।
বিলম্বিত মেলা আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণের দিন পর্যন্ত চলার কথা ছিল।
এরই মধ্যে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকবার মেলার সময়সূচিতে পরিবর্তনও আনা হয়। শেষ পর্যন্ত দুই দিন আগে মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্তও জানায় সরকার।
আরও পড়ুন