দুয়েকজনের পদস্খলনেও বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে: বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার
নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 28 Feb 2021 09:17 PM BdST Updated: 28 Feb 2021 09:19 PM BdST
-
-
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার
দুয়েকজনের পদস্খলনে পুরো বিচার ব্যবস্থা যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে প্রগতির ধারা যে বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মজীবনের শেষ কার্যদিবসে সহকর্মী, আইনজীবী ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে সেই সতর্কবাণী দিয়ে গেলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হওয়ায় রোববার বিচারিক দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেন এই বিচারক। এ উপলক্ষে তাকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই আয়োজনে যুক্ত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বিদায় সম্ভাষণ জানান।
বিদায় ভাষণে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, “বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত দুয়েকজনের পদস্খলনে পুরো বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। একবার যদি বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো সময় অপশক্তি আমাদের দেশ ও সমাজকে গ্রাস করে নিতে পারে। আমাদের প্রগতির ধারা অন্ধ প্রাচীরে বন্দি হয়ে যাবে।”
তবে সেই শঙ্কাকে মিথ্যে প্রমাণ করে সবার যৌথ প্রয়াসে বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা আরো পরিণত ও উন্নত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিদায়ী এই বিচারক বলেন, “বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, এই অনাকাঙ্ক্ষিত অপপ্রচার আজকাল প্রায়শ আমাদের কানে আসে। বিচার ব্যবস্থায় কারো একক অধিকার নাই। কারো একক প্রয়াসেও তা চলতে পারে না।
“সমষ্টিগত প্রয়াসে ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যাবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেরই একে অপরের সাথে নিবিঢ়ভাবে সংযুক্ত থেকে কাজ করতে হবে। সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর ঐকবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।”
কর্মজীবনের শেষ দিনে সর্বোচ্চ আদালতের এ বিচারক বলেন, একজন বিচারক সঠিকভাবে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে।
“একজন অভিভাবক যেমন সকলকে একত্রিত করে রক্ষা করেন। জ্যেষ্ঠ বিচারকগণও একইভাবে পরিবারের অভিভবকের মত কনিষ্ঠ বিচারকদের ভালোবাসবেন, স্নেহ করবেন, দিক নির্দেশনা দেবেন এটাই কাম্য। তাদের আগলে রেখে পথ দেখাতে হবে, যাতে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, “সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু, তা আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধান লক্ষণ রেখার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
“সেখানে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকারও নির্দেশনা আছে। এখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ পরিধির মধ্যে থেকে কে কতটুকু কাজ করবে, তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ লক্ষণ রেখা অতিক্রম করতে না পারে।”
তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি তার নিজস্ব গতিতেই চলে। শত চেষ্টা চালিয়েও এর গতি কেউ রোধ করতে পারে না, পারবে না। তাই আমি বলি, যত বাধা বিপত্তি কিংবা ঘাত-প্রতিঘাতই আসুক না কেন, আমাদের ঐকান্তিক ও ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টায় এর গতি (বিচার বিভাগের) কেউ কোনোদিন রোধ করতে পারবে না।”
বিচারকাজে বিচারক ও আইনজীবীর ভূমিকা, ন্যাবিচার, আইনের শাসন নিয়েও কথা বলেন সদ্য অবসরে যাওয়া এই বিচারপতি। তিনি মনে করিয়ে দেন, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র বিচারক ও আইনজীবীদের পক্ষে সম্ভব না।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার
“তবে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র বিচারক ও আইনজীবীদের পক্ষে সম্ভব না। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং এর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে বিচারক ও আইনজীবীগণের সাথে রাষ্ট্রের তথা সমাজের সকলের, সমাজের সমষ্টিগত প্রয়াসের প্রয়োজন। তা না হলে আইনের শাসন সুদূর পরাহত।”
আদালতের ঘোষিত রায় যেন কেউ বিতর্কিত করতে না পারে, সে আহ্বান রেখে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, “সংবিধানে পরিচালিত বিচার বিভাগ যখন কোনো আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করেন, অথবা শাসন-প্রশাসনের কোনো ভুল সংশোধনের জন্য কোনো মন্তব্য করেন, আদেশ, নির্দেশনা দেন, তা সংবিধানের ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদের আলোকে রাষ্ট্রের অন্য দুই বিভাগ তথা সকলেই মেনে চলতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। আমার প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের অঙ্গসমূহ তথা প্রশাসন যন্ত্র এই ব্যপারে সার্বক্ষণিকভাবে সতর্ক থাকবে।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় বিচারবিভাগ প্রদত্ত আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আমরা এক্ষেত্রে একজন বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে এক করে ফেলি। আমারা ভুলে যাই যে বিচারকও একজন মানুষ। তার বিচার হল সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দীর্ঘ দিনের সাক্ষী-সাবুদ ও আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ফল।
“বিচারের রায় বিপক্ষে গেলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বিচরককে বিতর্কিত করতে কোনো মন্তব্য করলে তা যেমন অন্যায়, তেমনি যার পক্ষে রায় যায়, তার স্তুতিবাক্যে বিচারককে বিভ্রান্ত করাটাও অন্যায়।
“আমার অনুরোধ, বিচার-বিশ্লেষণ না করে আইনের তথ্য-উপাত্ত স্পষ্টভাবে না জেনে কোনো রায়কে কেউ যেন বিতর্কিত না করে। অযৌক্তিকভাবে আদালতের ঘোষিত রায় বিতর্কিত করার এই চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, “আপনাদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আমরা যেন এমন কিছু না করি যাতে সুবিচারের প্রতি এই শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে এতটুকু কালিমা লাগে।”
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন মির্জা হোসেইন হায়দার। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
আইনে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর ১৯৭৯ সালে জেলা আদালত, ১৯৮১ সালে হাই কোর্ট বিভাগ ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন হোসেইন হায়দার।
এরপর ২০০১ সালের ৩ জুলাই তিনি হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক এবং ২০০৩ সালের ৩ জুলাই স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যোগ দেন।
-
খালেদার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো
-
জামিলুর রেজা চৌধুরীর নামে বুয়েটে ভবন
-
চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটে সমন্বিত ভর্তির আবেদন শুরু শনিবার
-
তীব্র তাপপ্রবাহ আরও ‘কয়েকদিন’
-
মাঠ পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কার্যালয় খুলছে
-
ভোট না হওয়া পর্যন্ত ইউপির জনপ্রতিনিধিরা বহাল
-
কোভিড-১৯: কর কমিশনার আলী আসগরের মৃত্যু
-
রোগী বাড়ছে ডিএনসিসি হাসপাতালে
সর্বাধিক পঠিত
- মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ মিথিলার স্বপ্নভঙ্গ
- ছুটি পেয়ে ১০ মাস পর পরিবারের কাছে ওয়াকার
- তোফায়েল এখন বলছেন, হেফাজত প্রশ্নে তখনই শক্ত হওয়া দরকার ছিল
- চূড়ান্ত টেস্ট স্কোয়াডেও শরিফুল, নেই শুভাগত
- ষষ্ঠবার নির্বাচিত শাদের প্রেসিডেন্ট ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ নিহত
- মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ড: সোনারগাঁওয়ের ওসি রফিকুল চাকরিই হারালেন
- ছাত্রদের উসকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় ছিলেন মামুনুল: পুলিশ
- কোভিড-১৯: আলমগীর হাসপাতালে
- করোনাভাইরাস: চার দিন পর দৈনিক মৃত্যু একশর নিচে নামল
- সুপার লিগ থেকে সরে দাঁড়াল ইংল্যান্ডের সব দল