ফরিদপুর মেডিকেলে যন্ত্রপাতি ‘নষ্টের প্রবণতা’ দেখেছে সংসদীয় কমিটি

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের আলোচিত পর্দা কাণ্ডে আর্থিক অনিয়মের পাশাপশি যন্ত্রপাতি ফেলে রেখে ‘নষ্ট করার প্রবণতা’ খুঁজে পেয়েছে সংসদীয় তদন্ত কমিটি।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2021, 01:13 PM
Updated : 24 Jan 2021, 01:13 PM

এক প্রতিবেদনে সংসদীয় উপ-কমিটি বলেছে, মালামাল ক্রয় প্রক্রিয়ায় ‘অনিয়ম’, কেনা মালামালের দামের সঙ্গে বাজার মূল্যের ‘অত্যধিক ব্যবধান’, মালামাল কেনার পর যথাযথভাবে ব্যবহার না করে ‘ফেলে রেখে নষ্ট করার প্রবণতা’ কমিটির তদন্তে দেখা গেছে।

২০১৯ সালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্দা ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে আসে। এক পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে বলে ওই বছর সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। 

পর্দা ও যন্ত্রপাতি কেনায় ১০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদক ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলা করে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয় ছয়জনের বিরুদ্ধে।

তারা হলেন- ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) গণপতি বিশ্বাস শুভ, হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) মিনাক্ষী চাকমা, হাসপাতালের সাবেক প্যাথোলজিস্ট এএইচএম নুরুল ইসলাম, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সি ফররুখ আহমেদ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন।

ওই ঘটনার পর ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি একটি উপ-কমিটি গঠন করে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটির গঠন করা হয়।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটির চতুর্থ বৈঠক হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে। এর আগের তিন বৈঠকে এ সম্পর্কিত সকল নথি পরীক্ষা করার পাশাপাশি সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শোনে কমিটি।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর পর এ সংসদীয় কমিটি আর কোনো বৈঠক না হওয়ায় উপ-কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিতে পারেনি। রোববার সেই প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জমা দেওয়া হয়।

উপ-কমিটির আহ্বায়ক মুহিবুর রহমান মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, তা গৃহীত হয়েছে। কমিটির আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে।”

প্রতিবেদনে ‍উপ-কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশে বলেছে, ‘রেসপনসিভ’ দরদাতার জায়গায় ‘নন-রেসপনসিভ’ দরদাতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পর্দা, অক্সিজেন জেনারেশন মেশিন, লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন কেনায় সরকারি নিয়ম (পিপিআর) অনুসরণ করা হয়নি। যন্ত্রপাতি পরীক্ষা না করে গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সব হাসপাতালের যন্ত্রপাতি গুণগতমান বজায় রেখে সংগ্রহ করা হচ্ছে কীনা এবং যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে কীনা তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয়কে একটি মনিটরিং টিম গঠন করতে বলেছে উপ কমিটি।

পর্দা কাণ্ড নিয়ে আলোচনা শুরু হলে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের সাবেক দুই প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আসম জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও ডা. গণপতি বিশ্বাসকে চাকরি হতে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে সরকার।

২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা এবং আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় হাই কোর্ট দুদককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

তদন্তে দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার ১৬৬টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

অনিক ট্রেডার্স ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিল পেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০ কোটি টাকা যন্ত্রপাতির দাম বেশি দেখানোসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে বিল আটকে দেয়। এ কারণে ২০১৭ সালের ১ জুন বকেয়া আদায়ে হাই কোর্টে একটি রিট করে অনিক ট্রেডার্স।

রিটের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অনিক ট্রেডার্সের সরবরাহ করা ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতির একটি তালিকা চেয়ে পাঠান।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ১০ কোটি টাকার বিপরীতে দামসহ ১০ আইটেমের যন্ত্রপাতির একটি তালিকা দেন।