অগ্নিকাণ্ডে রোগীর মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ দিতে ফের নির্দেশ ইউনাইটেডকে

ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লেগে কোভিড-১৯ ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ফের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2021, 11:37 AM
Updated : 11 Jan 2021, 11:41 AM

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তা পরিশোধ করতে বলেছে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ।

এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ, বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা তিনটি রিট আবেদন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নতুন করে উপস্থাপন করা হলে সোমবার রুলসহ এই আদেশ হয়।

আগুনে মারা যাওয়া চার রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

সেই সঙ্গে হাসপাতালে রোগীদের অধিকার রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবহেলার দায়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের অনুমতি কেন বাতিল করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ, নিয়াজ মোহাম্মদ মাহবুব, শাহিদা সুলতানা শীলা ও রাকিব হাসান।

নিয়াজ মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চারটি রিট আবেদনই উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু দুটি রিটের যুক্তি ও আরজি একই হওয়ায়একটি রিট আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যে কারণে তিনটি রিট আবেদনে এই আদেশ হয়েছে।

গত বছরের ২৭ মে রাতে গুলশানের বেসরকারি ওই হাসপাতালের প্রাঙ্গণে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য করা আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল।

ওই পাঁচজন হলেন- মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন এবং নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মাহবুব ও শাহিদা শিলা।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মাহবুব এলাহী চৌধুরীর ছেলে আননান চৌধুরী এবং ভারনন অ্যান্থনি পলের ছেলে আন্দ্রে ডোমিনিক পলও পরে সে রিট আবেদনে অন্তর্ভুক্ত হন।

এরপর নিহত রিয়াজুল আলমের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার ১৫ কোটি ক্ষতিপূরণ চেয়ে আলাদা একটি রিট আবেদন করেন। তাতে এক কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

তার আগে এ ঘটনার বিচারিক তদন্ত চেয়ে গত বছর ১ জুন আরও দুটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ ও হামিদুল মিসবাহ।

এরপর ২ জুন এসব আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৪ জুনের মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন দিতে বলে হাই কোর্ট।

এর মধ্যে পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা আসে।

রাজউক জানায়, কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করার অনুমতি নেয়নি ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত। তাছাড়া হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ।

অন্যদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনাকে ‘স্রেফ দুর্ঘটনা’ বলা হয়।

ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বছর ২৯ জুন এক আদেশে হাই কোর্ট ইউনাইটেড হাসপাতালকে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে বলে।

সেই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলাটির তদন্তও দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ইউনাইটেড হাসাপাতালের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা ক্ষতিগ্রস্ত সবার পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অর্থ দিতে চেয়েছিল, তাতে রাজি হয়নি চার পরিবার। অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া মনির হোসেনের পরিবার শুধু ২০ লাখ টাকায় সমঝোতায় সম্মত হয়।

ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় আসতে না পারার বিষয়টি হাই কোর্টকে জানানো হলে ওই বছর ১৫ জুলাই হাই কোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেয়।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একক বেঞ্চ হওয়ায় আদালত রুল জারি থেকে বিরত থাকে।

পরে হাই কোর্টের সে আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত বছর ২১ জুলাই চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয় এবং ইউনাইটেডের আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখে।

পরে গত বছর ২০ আগস্ট রিট আবেদনগুলো নতুন করে হাই কোর্টের রিট বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলে আপিল বিভাগ। সোমবার আবেদনগুলো উপস্থাপন করে আদেশ চাইলে রুলসহ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।