রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয় বলে সংস্থাটির সহ-সমন্বয়ক সানাউল হক জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সত্তোরোর্ধ্ব হান্নান খান স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে রেখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার তদন্তসহ দায়িত্ব পালনে হান্নান খানের নিষ্ঠা ও দক্ষতার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সানাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার হান্নান খানের জ্বর আসে। সেদিনই করোনাভাইরাসে পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। জ্বর বেড়ে গেলে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়।
“সেখানে গত দুইদিন তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পৌনে একটার সময় তিনি মারা যান।”
হান্নান খান পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে আইজিপি পদমর্যাদায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
হান্নান খান কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬১ সালে এই কলেজে পড়া অবস্থায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরীর বাবা) জনসভা প্রতিহত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তখন তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।
এরপর ১৯৬২ সালে হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসাবে নেতৃত্ব দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ছাত্র হান্নান খান আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
ওই বছরই কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের (তৎকালীন গভর্নর মোনায়েন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর হিসাবে প্রধান অতিথি ছিলেন) প্যান্ডেল ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় জননিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। সে মামলায় তখন তার ছয় মাসের জেল হয়।
স্বাধীনতার আগে আব্দুল হান্নান খান ব্রাক্ষনবাড়িয়া কলেজ, মৌলভীবাজার কলেজ, ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ, জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরে থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন হান্নান খান। ১৯৭৩ সালে বিসিএস প্রথম ব্যাচে এএসপি হন; প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ সিকিউরিটি সেল ও সিআইডিতে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা’র প্রধান তদন্ত তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হান্নান খান। এসময় পলাতক আসামি মেজর হুদাকে ব্যাংকক থেকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন।
এছাড়াও জেল হত্যা মামলা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যান আব্দুল হান্নান খান।