টিকা পাবে সবাই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের টিকা এলে পর্যায়ক্রমে সবাই তা পাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 12:47 PM
Updated : 26 Nov 2020, 04:58 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স উদ্বোধন করে তিনি বলেন, টিকা যাতে সবাইকে দেওয়া যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবং সেই ব্যবস্থা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যার যেখানে যখন প্রয়োজন হবে। ভ্যাকসিন যখন অ্যাভেইলেবল হবে, তখন আমরা এটা দিতে থাকব। বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেই ব্যবস্থা রেখেছে।”

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার তিন কোটি ডোজ কিনতে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে সরকার।

এছাড়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, যা আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশের হাতে আসতে পারে বলে সরকার আশা করছে।

করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি।

গতবছরের শেষে চীন থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে ছয় কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে, কেড়ে নিয়েছে ১৪ লাখ ২২ হাজার মানুষের প্রাণ।

বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে চার লাখ পেরিয়ে গেছে, সাড়ে ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে এ ভাইরাস।

কার্যকর কোনো ওষুধ না থাকায় করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে টিকার দিকে। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ভ্যাকসিন এলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পাবে। প্রথমে ৩ শতাংশ দেবে, পরে তাদের কাছেও (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিন আসবে তখন বাকি ১৭ শতাংশ বিভিন্ন দেশকে দিতে থাকবে। আমরাও সেখান থেকে পেতে থাকব।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি কাদের তৈরি করা ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দেবে, তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা আগের চেয়ে ‘উন্নত হয়েছে’ বলেই কোভিড সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশ  অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।

“আমাদের কোনো কাজ থেমে নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।”

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ‘এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে’ মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটা ধরে রাখতে সবার সহযোগিতা চান।

“এটা যেন আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না। সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে, নিয়ম মানতে হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা

জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত এক জরুরি সভা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার বিকালে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সভায় টিকা ব্যবহার পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন করে। 

বাংলাদেশ সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ এর তিন কোটি ডোজ টিকা কিনবে। এই টিকাটি দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, যা বাংলাদেশে বিদ্যমান রয়েছে।

টিকার পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী তথা স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারীর কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী এবং গণপরিবহনকর্মীরা টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। 

টিকাদান কার্যক্রম আরম্ভ হওয়ার আগে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রণয়ন ও টিকা প্রদানে জাতীয় পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়। 

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব ও মহাপরিচালক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।