ভারতে ভ্যাকসিন ছাড়লে বাংলাদেশ আগে পাবে: সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাজারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করলে বাংলাদেশ তা ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ পাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 01:17 PM
Updated : 23 Nov 2020, 01:45 PM

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘করোনাকালীন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সালমান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট যেদিন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করবে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে।

“বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম দামেই এই ভ্যাকসিন পাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে মাত্র ৫ ডলার। সেরামের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৬ মাসে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।”

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।

ভারত থেকে ওই টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহ করার জন্য গত অগাস্টে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। আর সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে চলতি মাসের শুরুতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই সরকারকে ওই ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট ভারত সরকারকে যে দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

“আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুখবর পাওয়া যাবে। তারপর থেকেই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু হবে।”

বাংলাদেশ বিশ্বে ‘সবচেয়ে কম দামে’ ভ্যাকসিন পাবে দাবি করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না ও ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের দাম রেখেছে ৪০ ডলার। সম্প্রতি চীনে বাজারজাত হওয়া আরেকটি ভ্যাকসিনের দাম ৬০ ডলার। আর বাংলাদেশ ভাকসিন পাবে ৫ ডলারে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইউন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প খাতে। এই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক তৈরির কাজ এবছর স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২২ সালে যখন পরবর্তী র‌্যাংকিং প্রকাশ করবে তখন বাংলাদেশকে ডাবল ডিজিটে (একশর নীচে) নিয়ে আসার প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটা আমরা পূরণ করব।

“ব্যবসা সহজীকরণ করতে যেসব অফিস জড়িত সেসব মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। বেসরকারি খাতকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে।”

সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে মন্তব্য করে আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য জিডিপির ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। মহামারীর কারণে গত অর্থবছরে প্রায় তিন মাস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ ছিল। তবু সরকার ৫ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করছে।

“এই প্রবৃদ্ধি সরকারি মিথ্যাচার। বিবিএস রাতে যে তথ্য ঠিক করে পরের দিন সকালে তা মন্ত্রীর ফোনে পরিবর্তন হয়ে যায়। এভাবেই এতো বেশি প্রবৃদ্ধি।”

তবে ব্যাংকের সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনাকে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে বর্ণনা করে সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেন তিনি।

মীর নাসির হোসেন বলেন, মহামারীর ধাক্কায় ভারতের মত দেশেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চীনের অর্থনীতি পড়েছে চাপে। অথচ এই সংকটেও বাংলাদেশ ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশের অর্থনীতি যে ‘শক্তিশালী’ অবস্থানে আছে এটা তার ‘প্রমাণ’।

সঙ্কট মোকাবিলায় শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে না থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।