সেজন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের শরণ নেওয়া হচ্ছে বলে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন।
‘খুব শিগগিরই’ আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির কাছে নোটিশ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতে পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।
এক পর্যায়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আইএলএফএসএল আদালতকে জানায়, ‘আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে’ জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে দেশে ফিরতে চাইছেন পি কে হালদার।
এরপর আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে করা আবেদনে বলা হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকেট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবে।
তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর হাই কোর্ট এক আদেশে বলে, পি কে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করতে হবে।
পি কে হালদার ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে যাতে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু ২৪ অক্টোবর আইএলএফএসএলের আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানায়, পি কে হালদার এখন দেশে ফিরছেন না।
শারীরিক অসুস্থতা এবং কোভিড-১৯ এর কারণে তিনি আসছেন না। তিনি কখন আসবেন পরে জানাবেন।
মঙ্গলবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচিত ব্যক্তি পি কে হালদার হাই কোর্টকে আসি বলেও আসলেন না। তিনি কমিশনের একটি দুর্নীতি মামলার আসামি। তাকে ধরার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
“ফেরার কথা বলার পরও দেখা গেছে তিনি হাই কোর্টকে ধোকা দিয়েছেন। কাজেই তার জন্য তো আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন খুব কঠোরভাবে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ধরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। অচিরেই ইন্টারপোলের কাছে হয়ত চিঠি চলে যাবে।
“পি কে হালদার এবং মামলার বৃত্তান্ত দিয়ে একটা নোটিস দিতে হবে ইন্টারপোলের কাছে। এর জন্য সময় লাগবে একটু, প্রক্রিয়া চলছে।”
এই আইনজীবী বলেন, “আমি মনে করি, পি কে হালদারের দেশে না ফেরা আদালত অবমাননার শামিল। পিকে হালদারের তো অবশ্যই আইএলএফএসএলেরও কর্মকাণ্ডও আদালত অবমাননা এবং আদালতের প্রতি এক ধরনের বেয়াদবি বলে আমি মনে করি।”
বিদেশে থাকা পি কে হালদার গত ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, আইএলএফএসএল তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে’ ওই সব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে।
তিনি দেশে ফিরতে পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সঙ্কট কেটে যাবে’ এবং মহামারীর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে বলে সেখানে দাবি করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, সেজন্য তিনি ‘ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে’ দেশে ফিরতে চান এবং তার সব প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আইএলএফএসএলসহ অন্যান্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায়দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান।
পি কে হালদারের ওই আবেদন পাওয়ার পর তার জীবনের নিরাপত্তায় আদালতের হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল।
পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।
এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ২১ জানুয়ারি পি কে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়।
তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ওই নির্দেশ দেওয়া হলেও পি কে হালদার ততদিনে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।