ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলেরে কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানিয়েছে, পি কে হালদার এখন দেশে ফিরছেন না।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।
এক পর্যায়ে আইএলএফএসএল আদালতকে জানায়, ‘আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে’ জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে দেশে ফিরতে চাইছেন পি কে হালদার।
তার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার হাই কোর্ট এক আদেশে বলে, পি কে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করতে হবে।
পি কে হালদার ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে যাতে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে বিচারক বলেন, “পি কে হালদার যদি দেশে আসেন, তাহলে এই কোম্পানি মেটারটা নিষ্পত্তি করা যাবে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য এই কোর্ট দেখতে চায় যে, তিনি বিমানযোগে দেশে পা ফেলা মাত্র তাকে যেন অ্যারেস্ট করা হয় এবং জেলে নেওয়া হয়। তাকে যেন বাইরে যেতে না দেওয়া হয়।
“এই কাজটা যদি করা হয়, তাহলে তার আবেদন অনুযায়ী তিনি যে মনে করছেন, তাকে কিডন্যাপ করা হবে, তা আর হবে না।”
হাই কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। আর আইএলএফএসএলের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।
পি কে হালদার ফিরছেন কি না- শনিবার জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএলএফএসএলের যে আইনজীবী (মাহফুজুর রহমান মিলন), উনি জানিয়েছেন যে ওই লোক (পি কে হালদার) না কি আসবেন না। দুদক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে একটা মেইল করেছেন।”
কেন আসছেন না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি তো আসলে জানি না কেন আসছেন না। উনার মক্কেল উনি জানেন। উনি একটা মেইল করেছেন, ওই লোকের নাকি কোভিড হয়েছে, জানি না। ওরা জানে।”
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাহফুজুর রহমার মিলন আমাদেরকে (দুদককে) জানিযেছেন, পি কে হালদার আসছেন না বলে তাদেরকে মেইল করেছেন। সে মেইলের একটি কপি আমাদের কাছেও পাঠিয়েছেন।
“শারীরিক অসুস্থতা এবং কোভিড-১৯ এর কারণে তিনি আসছেন না। সে কখন আসবেন পরে জানাবেন।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আইএলএফএসএলের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলনকে বুধবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে করা আবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবে।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর এই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল।
সেদিন আদালত বলেছিল, পি কে হালদার কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
শুনানিতে বিচারক এও বলেছিলেন, আত্মসাতকারীরা টাকা ফেরত দিতে চাইলে সে সুযোগ যেমন থাকা দরকার, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাও প্রয়োজন।
বিদেশে থাকা পিকে হালদার গত ২৮ জুন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, আইএলএফএসএল তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে’ ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে।
তিনি দেশে ফিরতে পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সঙ্কট কেটে যাবে’ এবং মহামারীর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে বলে সেখানে দাবি করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, সেজন্য তিনি ‘ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে’ দেশে ফিরতে চান এবং তার সব প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আইএলএফএসএলসহ অন্যান্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায়দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান।
পি কে হালদারের ওই আবেদন পাওয়ার পর তার জীবনের নিরাপত্তায় আদালতের হেফাজত চেয়ে আবেদন করে আইএলএফএসএল।
পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।
এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ২১ জানুয়ারি পি কে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়।
তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ওই নির্দেশ দেওয়া হলেও পি কে হালদার ততদিনে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।