দুই আসামির স্বীকারোক্তি এক সময়ে নেওয়ায় হাকিমকে হাই কোর্টে তলব

ধর্ষণের এক মামলার দুই আসামির জবানবন্দি এক সময়ে রেকর্ড করায় ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনছারীকে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 02:28 PM
Updated : 20 Oct 2020, 02:56 PM

আগামী ১১ নভেম্বর মামলার কেস ডকেট নিয়ে তাকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

মামলাটির এক আসামির জামিন শুনানিতে বিষয়টি নজরে এলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো অপরাধী দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে পারেন, যা একজন হাকিম রেকর্ড করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

বিধি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দিতে চাইলে তাকে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার জন্য

সাধারণত ন্যূনতম তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। এই সময়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে হাকিমের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবেন। তিনি পুলিশের সঙ্গে বা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আলাপও করতে পারবেন না।

এক সময়ে দুই ব্যক্তির স্বীকারোক্তি নিয়ে হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী সেই বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠায় তাকে তলব করা হয়েছে।

হাই কোর্টে আসামির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী আব্দুল জলিল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পি।

জলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ মামলায় গত বছরের ১৯ জুন অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। পরে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হেমায়েত উদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

চলতি বছরের ১৮ অগাস্ট এ মামলার এক আসামি মো. কাউছারকে হাই কোর্ট এক বছরের জামিন দেয়। ট্রাইব্যুনালে জামিন চেয়ে না পেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন আরেক আসামি শাহাদাত হোসেন।

জলিল বলেন, “আজ আপিল শুনানিতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির প্রসঙ্গ আসলে আমি আদালতকে বলি যে আসামির জবানবন্দি আইন অনুযায়ী হয়নি। তখন আদালত জবানবন্দির বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন।”

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার ওই নারী তার বন্ধু নবীরুল ইসলামের ফোন পেয়ে ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় তার এক বান্ধবীকে নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের বিসমিল্লাহ কারস লিমিটেডে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ৮টার দিকে একটি প্রাইভেটকারে ওঠেন নবীরুল, শাহাদাতসহ তারা। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ড্রাইভার মো. কাউছার ওরফে হৃদয়। প্রাইভেটকারটি কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে ৩০০ ফুট রাস্তার কিছুদূর যাওয়ার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাদীর বান্ধবীকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর আসামি নবীরুল, শাহাদাত ও কাউসার বাদীকে ধর্ষণ করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে করা হয়। পরে তারা বাদীকে খিলক্ষেত এলাকায় হোটেল রিজেন্সির সামনে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার পরদিন ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর ভাটারা থানায় ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেন বাদী।

দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে হস্তান্তর করা হয় মামলাটি।

তদন্তকালে গত বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার বাবুবাজার এলাকা থেকে আসামি শাহদাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুই আসামি নবীরুল ও কাউছারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বেলা ১২টায় মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামানের খাস কামরায় শাহাদাতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

ঠিক একই দিন একই সময়ে আসামি কাউছারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড সরাফুজ্জামান রেকর্ড করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদী ধর্ষণচেষ্টার মামলা করলেও তদন্ত ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।