তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। সেজন্য স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনও তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
“ইতোমধ্যে ১৯ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সেজন্য আমাদেরকে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। আমরা সতর্ক না হলে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘লেখক শেখ হাসিনা' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দূরদর্শী ও গতিশীল’ নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে আজ বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বেকারত্ব হ্রাস, কৃষিতে সফলতা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিপ্লব ঘটেছে।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার রচনায় জীবনের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি উৎসারিত হয়েছে গভীর বেদনাবোধ। আমরা সবাই জানি কী তার বেদনা, কী তার শোক!
“বঙ্গবন্ধুসহ পুরো পরিবারকে হারিয়ে যিনি সমগ্র দেশবাসীকে বরণ করে নিয়েছেন আপন পরিবার হিসেবে; তার পক্ষেই সম্ভব অসাধারণ ও অতুলনীয় ত্যাগ, শ্রম, মেধা ও দক্ষতায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এভাবে অব্যাহত এগিয়ে নেওয়া।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে ‘শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থপাঠ কেন অপরিহার্য’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “শেখ হাসিনা রচিত গদ্যে স্মৃতির দখিন দুয়ার খোলা থাকে সতত; তিনি সে দুয়ার খুলে দেখেন ফেলে আসা সময়, জনমানুষ ও জীবন। অন্যদিকে স্বদেশ, সমাজ এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে গভীর ভাবনার পাশাপাশি ভাগ্যবঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের রূপকল্পনায়ও উদ্ভাসিত তার প্রবন্ধপট। ‘ওরা টোকাই কেন’ থেকে ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইগুলোর নিবিড় পাঠে আমরা এ সত্যের সন্ধান পাই।”
একক বক্তৃতায় অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “একদিকে স্বজন হারানো বুকে কষ্টের পাথর চেপে, পিতা মুজিবের মতোই অন্ধকার সময়ের সকল জটিলতা-কুটিল ষড়যন্ত্র, ভয়-ভীতি, প্রলোভন ও প্রতিনিয়ত মৃত্যুবাণ উপেক্ষা করে, দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা।
“অন্যদিকে বেদনামথিত হৃদয়ে দেশে-বিদেশে, কারা অভ্যন্তরে এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনার সীমাহীন ব্যস্ততা উজিয়ে চলমান রেখেছেন তার লেখনী।”
“মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থসহ তার সম্পাদিত গ্রন্থ ও গোয়েন্দা দলিলপত্র উত্তর প্রজন্মের জন্যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতার গতিপথ অনুধাবনে সচেতন ও সতর্ক হতে সহায়তা করে। তাই শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ পাঠ করা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, “রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক ও বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা লেখক হিসেবেও বিশিষ্টতার দাবিদার। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তার গ্রন্থসমূহ ধারণ করেছে নিজের ঘটনাবহুল জীবনের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অজানা কথা, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা, সর্বোপরি একজন অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল মানুষের স্বপ্ন ও সংকল্প।
“শেখ হাসিনার রচনা-কুশলতা, ভাষাভঙ্গি, গদ্যশৈলী প্রমাণ করে লেখক হিসেবেও তিনি অনন্য ও স্বতন্ত্র। ”
অনুষ্ঠানের আগে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বাংলা একাডেমি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এ প্রদর্শনী চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
চিত্রকর্মে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন
প্রধানমন্ত্রীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে ‘উন্নয়নের কবি মানবতার মা’ শীর্ষক মাসব্যাপী প্রদর্শনী।
শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, বিশেষ এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও অর্জনগুলো ভিন্ন মাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহে থাকা ‘শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি’ শীর্ষক আর্টক্যাম্পে অঙ্কিত ১৩৪টি চিত্রকর্মও থাকবে এ প্রদর্শনীতে।
অন্যদিকে ‘রেখাচিত্রে জননী’ শীর্ষক আর্টক্যাম্পে প্রতিভাবান শিল্পীরা প্রধানমন্ত্রীর অবয়বের ৪৩টি রেখাচিত্র এঁকেছেন। সেসব চিত্রকর্মও ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
সোমবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
‘উন্নয়নের কবি মানবতার মা’ শীর্ষক মাসব্যাপী প্রদর্শনীটির দুয়ার আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ।