ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদের সম্পত্তি ‘ক্রোকের’ নির্দেশ

‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের মামলায় কারা অধিদপ্তরের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশীদের সম্পত্তি ‘ক্রোক’ এবং দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 11:49 AM
Updated : 22 Sept 2020, 11:49 AM

দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

 এদিন অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ থাকায় বজলুরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করে ২২ অক্টোবর শুনানির দিন ঠিক করে দেন।

এ সময় বজলুর রশীদের পক্ষে জামিন চাওয়া হলে তা নাকচ করে দেন বিচারক। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী বরখাস্ত এই কারা কর্মকর্তার স্থাবর সম্পতি ক্রোক এবং দুটো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

দুদকের আদালত কর্মকর্তা মো. জুলফিকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বজলুর রশীদ অনেক সম্পত্তি করেছেন, সেগুলো বিভিন্ন জায়গায়। সেগুলো যেন বেহাত না হয়, সেজন্যই ক্রোকের আদেশ চাওয়া হয়েছিল, আদালত মঞ্জুর করেছেন।”

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দীন গত বুধবার বজলুর ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।

সেখানে বলা হয়, ঢাকার সিদ্বেশ্বরী রোডে রূপায়ন হাউজিংয়ের স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের দুই হাজার ৯৮১ বর্গফুট আয়তনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন বজলুর রশীদ। এর দাম হিসেবে পরিশোধ করা তিন কোটি ৮ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি প্রদর্শন করতে পারেননি।

“এমনকি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়সংক্রান্ত কোনো তথ্যও তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি। ফলে তার এই পরিশোধিত তিন কোটি ৮ লাখ টাকা জ্ঞাতআয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের সঙ্গে বজলুর চুক্তি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ৫৪ হাজার টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে চেকে পরিশোধ করেন। আর বাকি তিন কোটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন।

বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

১৯৯৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বজলুর রশীদ ঢাকায় কারা সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ডিআইজি হিসেবে এর আগে সর্বশেষ ছিলেন রাজশাহীতে।

গতবছরের ৬ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা স্থানান্তর করতে ডিআইজি প্রিজনস (হেডকোয়ার্টার্স) বজলুর রশীদ অভিনব এক পন্থা বেছে নিয়েছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শতাধিক ধাপে তিনি পাঠিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। টাকা তুলেছেন তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহার।

এজন্য প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে সিম তোলা হয়েছে এবং সরাসরি নিজে টাকা না পাঠিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

এরপর এই কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুদকের তলবে হাজির হলে ২০ অগাস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওইদিনই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে। পরে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।