গাড়িচালক মালেকের মতো দুর্নীতিবাজ আরও বেরোবে: স্বাস্থ্যসচিব

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেকই শুধু নয়, এ রকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আরও যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে বলে স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 11:26 AM
Updated : 21 Sept 2020, 11:26 AM

সোমবার সচিবালয়ে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের যে নিয়ম আছে তাতে তার ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, আরও যারা এ রকম আছে তাদের ব্যাপারেও প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আরও এ রকম আছে, আরও আসবে।

“আমরা বলব দুর্নীতি করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আমরা কাউকে ছাড়তে চাচ্ছি না। যাদের বিরুদ্ধেই কথা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মালেককে রোববার অস্ত্র ও জাল টাকাসহ গ্রেপ্তারের পর তার শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

৬৩ বছর বয়সী মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়ি চালাতেন। করোনাভাইরাস মহামারীকালে স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে ডা. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করলে অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে সংযুক্ত ছিলেন তিনি।

৩৮ বছরের চাকরি জীবনে ৩৪ বছর ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার গাড়ি চালিয়েছেন মালেক।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা ভবন, একই এলাকায় একটি বিশাল ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন ছাড়াও কলাবাগানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে মালেকের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থও জমা আছে তার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেক, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যার প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে।

মালেকের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক কাজ করছে বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব।

এ বিষয়ে দুদক বলছে, মালেকসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত বছর থেকে অনুসন্ধান করছেন তারা।

সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করি। ইতোমধ্যে মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে।

“প্রাথমিক অনুসন্ধানে আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় সাতটি প্লট এবং এসব প্লটে চারটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়।”

অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মালেক ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, করোনাভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হলে করণীয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব কোভিড হাসপাতালকে নন-কোভিড করা হয়েছে, প্রাদুর্ভাব আবার বাড়লে সেগুলোকে কীভাবে আবার কোভিড হাসপাতাল করা যায় তাৎক্ষণিকভাবে সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

“আমরা আশা করছি, আমাদের এখানে সে রকম কিছু হবে না। যদি হয়ে যায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারব। ডাক্তার-নার্স, ওষুধ, পিপিইসহ সব কিছু আমাদের পর্যাপ্ত আছে।”

স্বাস্থ্যসচিব জানান, কোভিডের টিকা উন্নয়নে কাজ করছে এমন অন্তত পাঁচটি দেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। টিকা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রাখা হয়েছে।

চীন, ভারত, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি মনে হয় রাশিয়ারটা (টিকা) আমাদের কাজে লাগবে তাহলে আমরা নিচ্ছি। একইসঙ্গে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের একটা কোম্পানি আমাদের এখানে তাদের ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেছে। ভারতের কোম্পানির সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। পৃথিবীর যে দেশেই হোক আমরা টিকা আনব। কোনো দেশে যদি মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগ হয়, এটা কাজ করছে দেখা যায় তাৎক্ষণিকভাবে আমরা যেন তা নিয়ে আসতে পারি সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।”

বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করলে সেখান থেকেও তা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান সচিব আবদুল মান্নান।

সরকার বিনামূল্যে টিকা দেবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে টিকা পাবে। একইসঙ্গে যারা কোভিডের সময় সামনে থেকে কাজ করছে তারাও টিকা পাবে।

“সাধারণ মানুষের জন্য কতটা সুলভ করা যায় তা একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই করা হবে।”