কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো মন্ত্রণালয়েই আসছেন না; কাজ কম হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু ফেলে রাখা হচ্ছে না।
কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক টানেল বসিয়েছে। কোনো কোনো ভবনের প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। জুতা পরিষ্কার করে ঢোকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে।
কিছু কর্মকর্তা তাদের কক্ষের সামনে নোটিস ঝুলিয়ে অপ্রয়োজনে কাউকে কক্ষে না ঢোকার অনুরোধ করেছেন। কেউ কেউ রশি টাঙিয়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
ঢিলেঢালাভাবে কাজ চলায় কিছু কিছু মন্ত্রণালয় এই সুযোগে আসবাবপত্র মেরামতসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজে হাত দিয়েছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চালু করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হলেও জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয়গুলো তখনও স্বল্প পরিসরে খোলা ছিল।
এই সীমিত পরিসরের অফিসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজ ‘অবশ্যই কিছুটা কমেছে’ বলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বীকার করেছেন।
তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ অনেক কমেছে, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ আবার বেড়েছে।
সচিব ইউসুফ হারুন জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে অফিসে এসে কাজ করছেন। বয়স্ক, অসুস্থদের পাশাপাশি গর্ভবতী নারীরা এখন অফিসে আসছেন না।
“সীমিত পরিসরে অফিস চললেও জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ কিন্তু ফেলে রাখা হচ্ছে না। কেউ এসব কাজ ফেলে রাখলে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ফেলে রাখলে যদি জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।”
“২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একসঙ্গে উপস্থিত থেকে এখন কাজ চালিয়ে নিতে কোনো মন্ত্রণালয়েই কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এই জনবল দিয়েই এখন কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।”
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহ্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ফুলফিল কাজ চলছে, কাজ আগের থেকে বেড়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করছেন।
“অন্য যেসব কর্মকর্তা আছেন তারা যদি বাসায় বসে অনলাইনে তাদের কাজ করে দিতে পারেন তাহলে তাদের অফিসে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে, এভাবেই কাজগুলো চলছে।”
অফিস সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবগুলো দপ্তরেই কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।
এই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের তো তালগোল অবস্থা, কাজ অনেক বেড়ে গেছে। এখন দিনরাত নেই, যখনই প্রয়োজন তখনই কাজ করছি।”
অনুবিভাগগুলো খোলা রাখার দিন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কারা অফিসে আসবেন হবে তা দপ্তরপ্রধানদের ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ আগের থেকে বেড়েছে।
কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়েকেও মহামারীতে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে বলে এসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
এতদিন তেমন কোনো কাজ না থাকলেও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো নিয়ে বেশকিছু কাজ করতে হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
“আগে যে কাজগুলো আমরা সচিবালয়ে গিয়ে করতাম, এখন সেগুলোর বেশিরভাগ ভার্চুয়ালি করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে একসঙ্গে ২৫ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে উপস্থিত হচ্ছেন না।”
নাম, পদবি ও কোন দপ্তরে কাজ করেন সেসব তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক মন্ত্রণালয়েরই এখন কাজ নেই, কিন্তু তারা মুখে স্বীকার করবে না। কারণ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে প্রতিদিন অফিসে করতে হচ্ছে এবং তারা কোনো না কোনো কাজ দেখানোর চেষ্টা করছেন, আসলে এসব কোনো কাজই না।”