করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থী, বন্দি ও আসামিরা জেলহাজতে মানবেতর জীবনযাপন করছে; এছাড়াও আইন পেশা স্থবির হয়ে পড়ায় ঢাকার আদালত আংশিকভাবে খুলে দিতে বুধবার এ আবেদন জানানো হয়।
সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান স্বাক্ষরিত আবেদনের অনুলিপি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সমিতির দপ্তর সম্পাদক (অফিস সেক্রেটারি) এই এম মাসুম।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলা ও বিস্তাররোধে সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। পরে তিন দফায় বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। দেশের সব আদালতেও ওই সময় পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে বুধবার সরকার সাধারণ ছুটি আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
ঢাকা আইনজীবী সিমিতির আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। করোনাভাইরাস বর্তমানে বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
“কেননা ভুক্তভোগী ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিবর্গ আইনজীবীদের আইনের সেবা দেয়ার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছেন। আদালত বন্ধ থাকায় আইনজীবীদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আইনের সেবা দিতে পারছেন না তথা আইন পেশা স্থবির হয়ে পড়েছে।”
এ অবস্থায় ঢাকার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতগুলোর নিষেধাজ্ঞা, জামিনের দরখাস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আদালত আংশিকভাবে খুলে দিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে লিখিত আবেদনে।
তবে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বেশ কয়েকজন আইনজীবী এই মুহূর্তে আদালত না খোলার পক্ষে নন। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস এতটাই ছোঁয়াচে যে, অল্প কয়েকটি আদালত খুলতে গেলে সেখানে যে পরিমাণ লোক সমাগম হবে তাতে হিতে বিপরীত হবে।
ঢাকার নিম্ন আদালতের অভজ্ঞ আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বলেন, “মানুষের প্রথম মৌলিক অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকা।আমি যদি বাঁচতেই না পারি তবে নিজ বাড়ি আর কারাগারের প্রভেদ কিভাবে করব, আর একটা-দুইটা আদালত খোলা হলে তো সবগুলোই খোলা যায়।”
“আদালত খোলার এখনও সময় আসেনি,” বলেন এই আইনজীবী।
সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবী হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান একই মত দিয়ে বলেন, এ মুহূর্তে আদালত খোলা কোনোভাবেই উচিত হবে না।
তবে সর্বোচ্চ আদালতের আরেক আইনজীবী পারভেজ হাসেম সীমিত পরিসরে আদালত খুলে দেওয়ার পক্ষপাতি।
তিনি বলেন, “লকডাউনের আগে থেকে জামিনযোগ্য ধারার মামলায় অনেকে কারাগারে আটক আছেন। এখন আদালত খোলা থাকলে তারা জামিন পেয়ে যেতেন। তাদের মৌলিক অধিকার অক্ষুন্ন থাকত। সুতরাং সীমিত পরিসরে আদালত খোলা উচিৎ।”