সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভুল মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি তুলে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে, পিপিইর নাম দিচ্ছে বেশ ভালো, কিন্তু জিনিসগুলো বোধহয় ঠিকমত যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিৎ।”
পরে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ব্যাখ্যা দিতে গেলে তাকে থামিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এন-৯৫ লেখা আপনাদের বক্সে। কিন্তু ভিতরের যে জিনিসটা, সেটা সঠিক থাকে কিনা, এটা একটু আপনাদের দেখা দরকার।
“আপনারা দিয়ে দিচ্ছেন, বলে দিচ্ছেন। কিন্তু যারা সাপ্লায়ার, তারা ঠিক মতো এটা দিচ্ছে কিনা বা সঠিক জিনিসটা কিনছে কিনা, এটা দেখা দরকার। এটা দেখবেন। যেহেতু আমি ..বেশি কিছু করতে চাই না, আমি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি ছবিটা, ওটা যাচাই করে দেখার জন্য। এটা একটু নজর দিয়েন।”
“এখানে যেহেতু অনেকে লাইভে আছেন, আমরা কথা বলছি না। লেখা আছে এন-৯৫। কিন্তু ভিতরের জিনিস কিন্তু সবসময় সঠিকটা যাচ্ছে না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক।
ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা; বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমেও আসে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালককে চিঠি দেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে জন্য এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’।
হাসপাতালে কীভাবে ‘ভুল মাস্ক’ গেল সে বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিএমএসডি পরিচালক।
সেখানে বলা হয়েছে, “সিএমএসডি কোনো দেশীয় চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নিকট এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করে নাই। বাংলাদেশি চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জেমএআই কোভিড-১৯ সংক্রমণের পূর্বে থেকে হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার, সাধারণ মাস্ক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স/ কোয়ালিটি সার্টিফিকেট/ ছাড়পত্র অনুযায়ী সিএমএসডিকে সরবরাহ করে আসছে।
“উক্ত কোম্পানি যে মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে, সে মোড়কগুলোতে এন-৯৫ মুদ্রিত ছিল। সিএমএসডি ভুলক্রমে সাধারণ মাস্ক হিসেবেই পণ্যগুলো সরবরাহ করে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়েই নজরে আসে। সিএমএসডি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহকারী কোম্পানিকে মাস্কগুলো ফেরত দেয়। কেন এমন মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে তার লিখিত জবাব চায়।”
মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে নজরদারি কঠোর করার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা এদিন বলেন, “কেউ যদি এরকম কিছু করে থাকে … বা এর সাপ্লায়ার কে… আমি শুধু বললাম, মহানগর হাসপাতালে এটা গেছে। বাবুবাজারের যে হাসপাতালটা .. এটা তো করোনাভাইরাসের জন্য ডেডিকেটেড। তো এরকম কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় যদি হয়, এটা তো ঠিক না।
“আপনারা যাদেরকে এনগেজড করেন, যাদেরকে ব্যবসাটা দেন বা যাদেরকে নেয় বা সাপ্লাই দেয়, তারা সঠিকটা দিল কিনা। বক্স তো ঠিক আছে, কিন্তু বক্সের ভিতরের জিনিসগুলি ঠিক আছে কিনা আমার মনে হয়, নজরদারি বাড়ানো দরকার…বা যিনি রিসিভ করবেন, তিনি যেন দেখেশুনে এটা রিসিভ করেন। খালি আমি এটুকু বলতে চাই।”
সিএমএসডি পরিচালক শহিদ উল্লাহ এসময় বলেন, “হয়ত জরুরি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়ে থাকতে পারে, এখন আমরা চাচ্ছি আমাদের এই ভুলগুলো যেন না হয়, সেটা সঠিকভাবে বিতরণ যেন নিশ্চিৎ করতে পারি, সে উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।”
‘পিপিই যাদের দরকার, তারাই ব্যব্হার করবে’
কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা কাজের জন্য পিপিইসহ নির্ধারিত সুরক্ষা সামগ্রীর অপব্যবহার না করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন,‘যেগুলো সম্পূর্ণভাবে রোগী দেখা জন্য, সেগুলো রোগী দেখার জন্যই থাকবে এবং ওই হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট যারা, তাদেরকেই ব্যবহার করতে হবে।
“বাকি সবাই সুরক্ষিত থাকবার জন্য যা ব্যবহার করা হয় মাস্ক বা হ্যান্ড গ্লাভস বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সেগুলো সকলে মিলে ব্যবহার করবেন।’
“ডাক্তার, নার্স যারা রোগী দেখবেন, তাদের যে জিনিসগুলো ব্যবহার করা দরকার, সেগুলো যদি সবাই মিলে যত্রতত্র ব্যবহার করতে শুরু করে, তাহলে আমরা ডাক্তার নার্সদের দেব কীভাবে?” বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৪০টি পিপিই সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৯টি বিতরণও করা হয়েছে।
সবাইকে স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ,গাজীপুর জেলায় রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু কিছু জেলায় এটা এখনও ছড়াতে পারেনি। তাদেরকে আমরা বলব, তারা যেন নিজেরাও সেই ব্যবস্থা নেন যে বাইরে থেকে কেউ যেন না যেতে পারে।”