মাস্ক কেনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘সংশ্লেষ নেই’: কেন্দ্রীয় ঔষধাগার

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক এর মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তার ছেলে, স্বাস্থ্য সেবা সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জড়িয়ে ‘মানহানিকর সংবাদ’ প্রকাশিত হচ্ছে অভিযোগ করে মামলা করার হুমকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার-সিএমএসডি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2020, 02:52 PM
Updated : 21 April 2020, 07:17 PM

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওইসব ‘খবরের’ প্রতিবাদ জানিয়ে সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ বলেছেন, “অপপ্রচারগুলিতে ইচ্ছাকৃতভাবে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গকে জড়িয়ে মিথ্যা রাজনৈতিক এবং চরিত্রগত রটনারও অবকাশ করা হচ্ছে।”

জেএনআই হসপিটাল রিকুইজিটের সরবরাহ করা ফেইস মাস্কের প্যাকেট। এটিএন নিউজের স্ক্রিনশট

মাস্ক কেনার সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তার ছেলে, স্বাস্থ্য সেবা সচিব বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ‘কোনো সংশ্লেষ নেই’ জানিয়ে ‘স্বার্থসিদ্ধিমূলক বিভ্রান্তিকর’ তথ্যে বিভ্রান্ত না হতে চিকিৎসকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক।

ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা; বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমেও আসে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালককে চিঠি দেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে জন্য এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’।

হাসপাতালে কীভাবে ‘ভুল মাস্ক’ গেল সে বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিএমএসডি পরিচালক।

সেখানে বলা হয়েছে, “সিএমএসডি কোনো দেশীয় চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের নিকট এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করে নাই। বাংলাদেশি চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জেমএআই কোভিড-১৯ সংক্রমণের পূর্বে থেকে হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার, সাধারণ মাস্ক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স/ কোয়ালিটি সার্টিফিকেট/ ছাড়পত্র অনুযায়ী সিএমএসডিকে সরবরাহ করে আসছে। 

“উক্ত কোম্পানি যে মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে, সে মোড়কগুলোতে এন-৯৫ মুদ্রিত ছিল। সিএমএসডি ভুলক্রমে সাধারণ মাস্ক হিসেবেই পণ্যগুলো সরবরাহ করে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়েই নজরে আসে। সিএমএসডি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহকারী কোম্পানিকে মাস্কগুলো ফেরত দেয়। কেন এমন মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে তার লিখিত জবাব চায়।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরবরাহকারী কোম্পানি জেমএআই তখন ‘দেরি না করে’ ভুলের ব্যাখ্যা দেয় এবং সিএমএসডি পরিচালক বিষয়টি গণমাধ্যমকে ব্যাখ্যাও করেন।

বিষয়টি সেখানেই ‘শেষ হওয়া উচিৎ ছিল’ মন্তব্য করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সিএমএসডি বর্তমান কোভিড-১৯ বৈশ্বিক দুর্যোগকালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ক্রয় আইন অনুসরণ করেই ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। অথচ বিভ্রান্তিমূলকভাবে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের পুত্র, স্বাস্থ্য সেবা সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জড়িয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

“সিএমএসডি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চায় যে, এই ক্রয় প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গের কোনো সংশ্লেষ নাই এবং তাদের আর্থিক বা অন্যান্যভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।”

মাস্ক কেনার সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যদের জড়িয়ে ‘রটনা’ ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে সিএমএসডি বলেছে, “এই ধরনের অপরাধী চক্রকে হুঁশিয়ার করা যাচ্ছে যে, তারা এ ধরনের অপচেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত না করলে ডিজিটাল তথ্য আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এন-৯৫ মাস্ক কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদিত হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তারা ওই মাস্ক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা এর সমমানের একাধিক মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। এগুলো হল US-FDA বা CE সনদপ্রাপ্ত কেএন-৯৫, এফএফপি ২ বা পি ২ মাস্ক।

সিএমএসডি এন-৯৫ মাস্ক পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরবরাহ করতে না পারলেও ‘সনদপ্রাপ্ত বিকল্প মানসম্পন্ন’ মাস্ক সরবরাহ করছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সব সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ অর্থ থেকে নিজ উদ্যোগে পিপিই, মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় বা সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছে।”