এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণে আক্রান্ত ছাড়ালো ৮০০, মৃত্যু ৩৯ জনের

দেশে এক দিনেই ১৮২ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮০৩ জন। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2020, 08:41 AM
Updated : 13 April 2020, 11:12 AM

সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৯ জন।

গত এক দিনে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

অন্যদিন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে আক্রান্ত ও মৃতদের বয়স, এলাকাসহ বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করেন। সোমবারের ব্রিফিংয়ে তিনি ছিলেন না, সেসব তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ব্রিফিংয়ে।

নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চেম্বারে বসছেন না অনেক চিকিৎসক; অনেক জায়গায় টেকনিশিয়ানরা কর্মস্থলে না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও বন্ধ আছে বলে রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে। কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যু এবং রোগী রেখে চিকিৎসকদের পালিয়ে যাওয়ার খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।

তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। উনারা এগিয়ে এসেছেন দেশবাসীর সেবায়। তারা তাদের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এই কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য দিতে চাচ্ছেন।

“ঢাকা শহরের মধ্যে যে হাসপাতালগুলো আমরা নেব, তার মধ্যে ৫০০ শয্যার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৭০০ শয্যার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- এগুলো সবগুলোই ভালো হাসপাতাল, সেখানে আইসিইউ রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল যেগুলো আছে, তারা এগিয়ে আসছেন, তাদের হাসপাতালগুলোও আমরা তালিকাভুক্ত করে নিচ্ছি।”

মন্ত্রী জানান, প্রতিটি জেলার মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যারা করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাতে আগ্রহী, তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন বার্ন ইউনিট, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের পুরনো একটি অংশকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, ফুলবাড়িয়া এলাকার রেলওয়ে হাসপাতাল ও নয়াবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতালও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-বিআইটিএডিতেও করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সারা দেশে ৭ হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১১২টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তত রাখা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করেও সব রোগীকে হাসপাতালে সেবা দেওয়া যে কঠিন হবে, সে কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের হাসপাতাল ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা তো মজবুত করছি। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

“আমাদের মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ মোকাবিলার মূল অস্ত্র ঘরে থাকা এবং ঘরে থাকা এবং পরীক্ষা করা… টেস্ট করা, যার মাধ্যমে যারা সংক্রামিত হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করা যাবে, তাদের আইসোলেশনে রাখা যাবে। তারা যেন আর কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে। এটি সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, অস্ত্র। এদিকে আরও খেয়াল রাখতে হবে।”

ভেন্টিলেটর সঙ্কট যে পুরো পৃথিবীজুড়েই আছে, সে কথা তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, “আরও চার-পাঁচশ নতুন ভেন্টিলেটর আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।”

এ পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণেরে অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। নিষেধাজ্ঞার পরও এ দুটি এলাকা থেকে মানুষ অন্য এলাকায় যাচ্ছে এবং তাদের অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ ধরা পড়ছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি গতকাল সমস্ত বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের পরিচালকদের সাথে আলোচনা করেছি। সব জায়গায় দেখা গেছে, জেলাতে যেখানে সংক্রামিত হয়েছে, যারা সংক্রামিত করেছেন সে ব্যক্তিগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে, বিশেষ করে ওই এলাকাগুলোতে।

“কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, লকডাউনটা মানুষে পুরোপুরি মেনে চলছে না। বাজারে জটলা পাকিয়ে আছে, অনেক লোকজন ঘোরাফেরা করছে। এ জিনিসটি পরিহার করতে হবে। যেখানে ঘোরাফেরা করবে, সেখানেই সংক্রমিত হবে। ইতোমধ্যে আপনারা জানেন, আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। সেটি যেন না বাড়ে, সেদিতে খেয়াল রাখতে হবে। ’

পুরনো খবর