করোনাভাইরাস: প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া কভিড-১৯ রোগের বিপর্যয় সামলাতে ‘উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি-ফাংশনাল ওয়ার্কিং কমিটি’ গঠন করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন একদল শিক্ষক-অধিকারকর্মী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2020, 04:00 PM
Updated : 22 March 2020, 04:01 PM

নভেল করোনোভাইরাসে দেশে ২৭ জন আক্রান্ত এবং দুজনের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে এই দাবি জানান তারা।

এই ৬৪ জন শিক্ষক-অধিকারকর্মীর চিঠিতে বলা হয়েছে, “এত বড় মাপের একটি মহামারী সামাল দেওয়ার জন্য সঠিক ও সমন্বিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

“আমরা চাই, সরকার আর কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় করে, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পরিবেশবিদ ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর সমন্বয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। যারা নিয়মিতভাবে সরকারের কাজের তদারকি করবে, দিক নির্দেশনা প্রদান করবে এবং সকল নাগরিককে প্রকৃত তথ্য জানাবে।”

এজন্য তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন এই শিক্ষক-অধিকারকর্মীরা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, খুশি কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুজন সম্পাদক বদিউল মজুমদার, পরিবেশ অধিকারকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, রোবায়েত ফেরদৌস, নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়ম, সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

“উপদ্রুত দেশগুলোথেকে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী ভাই-বোনদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে কোয়ারেন্টাইন করার সরকারি ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে কত বড় বিপদে ফেলতে পারে,” বলা হয় বিবৃতিতে।

“মহাবিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী সনাক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; নেই চিকিৎসকদের রক্ষা ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটার! পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে, তা তাই বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না।”

খোলা চিঠিতে ১০টি দাবি জানান এই মানবাধিকারকর্মী-শিক্ষকরা

>> অবিলম্বে শ্বেতপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মহামারী রোধের পরিকল্পনা ও তা কার্যকর প্রণালী জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

>> অবিলম্বে দেশের সর্বত্র বিনামূল্যে টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত রাখতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও ট্যাক্স-মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

>> দেশের সকল প্রবেশ পথ- বিমান, নৌ, স্থলবন্দর, রেল স্টেশন, নৌঘাট সতর্ক নজরদারির আওতায় নিতে হবে।

>> কোয়ারেন্টিনের জন্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্যে নির্দিষ্ট করতে হবে।

>> স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। দেশের গার্মেন্টস কারখানা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ) সরবরাহ করতে হবে।

>> গণপরিবহন ও গণপরিসরগুলো এবং সংক্রমণের হটস্পট নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলখানার ঝুঁকিপূর্ণ জনচাপ দূর করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আটক, মেয়াদ উত্তীর্ণদের মুক্তি দিতে হবে।  বস্তিবাসীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি বস্তিতে পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটর সেল/ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

>> করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জরুরি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আপদকালীন সময়ে সবেতন ছুটি দিতে হবে। ছুটিকালীন শ্রমিকদের মজুরি যাতে ঠিকমতো পরিশোধ হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

>> নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুতদারী বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

>> বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

>> পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় সরকারের কী পরিকল্পনা তা প্রকাশ করতে হবে।