অস্ত্র ও মাদকের মামলায় জি কে শামীমের জামিন

অস্ত্র মামলায় জি কে শামীমের জামিনের খবর পেয়ে অনুসন্ধানে জানা গেল মাদকের মামলাটিতেও উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2020, 12:23 PM
Updated : 7 March 2020, 12:44 PM

র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর পাঁচ মাস আগে গ্রেপ্তার হন বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম।

তখন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছিল র‌্যাব। এর একটি অস্ত্র আইনে, একটি মাদক আইনে এবং একটি মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন করে আরেকটি মামলা।

অস্ত্র আইনে জি কে শামীম গত মাসে হাই কোর্ট থেকে জামিন পান বলে শনিবার খবর ফাঁস হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কারা কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মাদকের মামলায়ও তিনি জামিন পেয়ে গেছেন।

জি কে শামীম এখন যেহেতু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন, সেহেতু তার সংক্রান্ত আদালতের যে কোনো আদেশ এই কারাগারে যায়।

হাই কোর্ট থেকে জামিন আদেশের অনুলিপি গেছে কি না- শনিবার জানতে চাইলে ঢাকার জেলার মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্ত্র এবং মাদকের দুটি মামলায় তার (শামীম) জামিন হয়েছে।”

কবে হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাসখানেক হবে, তারিখ এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো মামলায় শামীমের জামিনের কোনো নথি কারা কর্তৃপক্ষ পায়নি বলে নিশ্চিত করেন এই কারা কর্মকর্তা।

কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে অস্ত্র মামলায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান জি কে শামীম; লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয় ১২ ফেব্রুয়ারি।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অর্থাৎ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ফজলুর রহমান খান এ বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’।

অ্যাডভোকেট ফজলুর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, “অনেকেই আমাকে ফোন দিচ্ছে। তবে আমার জানা মতে জি কে শামীমের কোনো মামলার বেইল এই কোর্ট থেকে হয়নি। কেউ যদি অন্যভাবে করে থাকে, সেটা তো আমরা দেখতে পারব না।”

সুপ্রিম কোর্টের কোনো আইনজীবী জি কে শামীমের জামিন নিয়ে এই আদালতে গিয়েছিলেন কি না- জানতে চাইলে ফজলুর বলেন, “সেদিন দেখলাম মানি লন্ডারিংয়ের মামলার বেইল পিটিশন নিয়ে গেছিল। আমি বললাম যে জুরিসডিকশন (এখতিয়ার) নাই।”

মমতাজ উদ্দিন মেহেদীসহ কয়েকজন আইনজীবী ফেব্রুয়ারিতে আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তারের সময় নিজের অফিসে কে শামীম

মমতাজ উদ্দিন মেহেদীর কাছে জানতে চাইলে জি কে শামীমের জামিনের বিষয়টি স্বীকারও করেননি, অস্বীকারও করেননি।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের কোনো বেঞ্চ থেকে জি কে শামীমের জামিন করিয়েছেন কি না- এ প্রশ্নে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না দেখে বলতে পারব না, ফাইল দেখতে হবে। কখন কোন মামলা করি, কখন কোন মামলায় দাঁড়াই- না দেখে বলতে পারব না।”

জি কে শামীমের পক্ষে মামলায় লড়ছেন কি না- জানতে চাইলে মেহেদী বলেন, “আমি কিছুই বলতে পারব না এখন। হইতেও পারি। কোনো তো সমস্যা নাই। তার আইনজীবী হতে তো কোনো বাধা নাই।

“সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে আমি তার (জি কে শামীমের) মামলা করি এবং তার মামলা আসলে আমি করব, এটুকু বলতে পারি। এ ধরনের মামলা করার ক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নাই।”

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানের নিকেতনে জিকে শামীমের অফিস থেকে তাকে এবং তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

জি কে শামীম যুবলীগ নেতা পরিচয়ে গণপূর্তের সব কাজের দরপত্র বাগিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি শ’ শ’ কোটি টাকার কাজ ছিল তার প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের হাতে।

ওই অভিযানে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পরদিন তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করে র‌্যাব। এর মধ্যে অস্ত্র ও মুদ্রা পাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক আইনের মামলায় শুধু শামীমকে আসামি দেখানো হয়।

গ্রেপ্তার জি কে শামীমের বিরুদ্ধে ২১ অক্টোবর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার ৫৫১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।

অস্ত্র আইনের মামলাটির বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বিচারিক আদালতে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

মাদক আইনের মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার হাকিম আদালত থেকে ঢাকার আট নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে সম্প্রতি স্থানান্তর হয়েছে।

মুদ্রা পাচার ও অবৈধ সম্পদের মামলা দুটি এখনও তদন্তাধীন।