কাঠগড়ায় ফুরফুরে জি কে শামীম

অস্ত্র আইনের মামলায় অভিযুক্ত করে বিচার শুরুর আদেশ দিলেন বিচারক; তবে ওই আদেশ নিয়ে তেমন কোনো দুঃশ্চিন্তা দেখা গেল না যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে হাজার কোটি টাকার সরকারি কাজের ঠিকাদারি চালিয়ে আসা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের মধ্যে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2020, 03:37 PM
Updated : 28 Jan 2020, 03:39 PM

মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর চতুর্থ বিশেষ ট্রাইবুনালে তাকে দেখা গেল হাস্যোজ্জ্বল, ফুরফুরে মেজাজে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযোগের মধ্যে গতবছর ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর আর মদের সঙ্গে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল র‌্যাব।

এর মধ্যে একটি ছিল শামীমের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল। বাকি সাতটি তার সাতজন দেহক্ষীর ব্যবহারের শটগান, যেগুলো তাদের নামেই লাইসেন্স করা। 

শামীম ও তার সাত দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় এবং পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়,লাইসেন্স থাকলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে এসব অস্ত্র ভীতি প্রদর্শন ও অবৈধ কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। 

এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ থাকায় শামীমসহ আটজনকে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের হাজত থেকে ওই ভবনের দোতলায় ঢাকার মহানগর চতুর্থ বিশেষ ট্রাইবুনালে হাজির করা হয়।

শামীমকে এসময় বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়ালে তার স্ত্রী এবং কয়েকজন আত্মীয় আসেন কথা বলতে।

তাদের উদ্দেশে জি কে শামীম বলেন, “কোনো সমস্যা নেই। আমার জন্য পানির বোতল আনো।”

তারপর উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, “আমার জন্য কে কে শুনানি করবেন?”

কিছুক্ষণ পর বিচারক মো. রবিউল আলম খাস কামরা থেকে এজলাসে ওঠেন। শামীমের আইনজীবী শওকত ওসমান বলেন, “আমি তার অব্যাহতি চাচ্ছি না। নথিপত্রে যা আছে তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হোক।”

শামীমের সাত দেহরক্ষীর  মধ্যে মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও  সামসাদ হোসেনের পক্ষে  অব্যাহতির আবেদন করেন তাদের আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ শুনানিতে বলেন, এই চারজনের প্রত্যেকেই  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। সরকারের অনুমতি নিয়েই তারা নতুন করে জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসাবে চাকরি নেন। তারা নিবন্ধিত বৈধ অস্ত্র বহন করছিলেন। যে এলাকায় তারা এ অস্ত্র বহনের, ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলেন, সেখানেই তারা অস্ত্র তাদের হেফাজতে রেখেছিলেন।

“তারা তাদের বস শামীমের ব্যাংক, বীমার টাকা উত্তোলন ও জমার সময় পাহারা দিতেন। নিরাপত্তার কারণে এ অস্ত্র ব্যবহার করতেন।”

এই আইনজীবী বলেন, নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম ওই অস্ত্র জব্দ করলেও তার স্বাক্ষর জব্দ তালিকায় নেই।

“অভিযানের দিন টেলিভিশনের লাইভে দেখা গেছে র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শুধু টাকার বান্ডিল পেয়েছে, কোনো অস্ত্র তখন দেখা যায়নি। আমার মক্কেলরা কোনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বা বহন করেননি।”

বিচারক এ সময় বলেন, অস্ত্রগুলো যে নিবন্ধিত- সে কথা রাষ্ট্রপক্ষও বলেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগও করা হয়নি। অভিযোগ করা হয়েছে ১৯ (ঙ), ২১ আর ২৩ ধারায়। যেখানে বলা হযেছে বৈধ অস্ত্র দিয়ে ভীতি সৃষ্টি করা, নিবন্ধিত অস্ত্রের শর্তের বরখেলাপ এবং বিশ্বাসভঙ্গের কথা। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বেআইনি হওয়ার সুযোগ নেই।

শুনানির এক পর্যায়ে  আইনজীবী  ফারুক বলেন, আগে ব্রিটিশ আমলে এই আইনের ধারা জামিনযোগ্য ছিল। এখন আর তা নেই।

বিচারক তখন বলেন, সিপাহী বিদ্রোহ দমনের জন্যই এ আইন করা হয়েছির। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তখনকার সময় আর এখনকার সময় ভিন্ন। সুতরাং ওই যুক্তি খাটে না।

অব্যাহতির শুনানিতে আইনজীবী ফারুক বলেন, “আমি আমার পেশাগত জীবনে কখোনো দেখিনি যে জব্দ তালিকায় আসামির স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে তো দেখা যাচ্ছে। ওই হাকিমের (সারোয়ার আলম) শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি জব্দ তালিকা করতে গিয়ে অনিয়ম করেছেন।”

বিচারক তখন বলেন, “এগুলো ট্রায়াল ম্যাটার। ট্রায়ালে গিয়ে বলবেন।”

পরে আসামি আমিনুল ইসলামের পক্ষে অব্যাহতি চান অন্য একজন আইনজীবী। আসামিদের সবার পক্ষে এ সময় জামিনও চাওয়া হলে তা নাকচ করেন বিচারক।

বিচারক অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে আসামিরা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। পরে বিচারক সাত আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করেন।

জিকে শামীম এবং তার ছয় দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯(ঙ) অথাৎ, বৈধ অস্ত্র দিয়ে ভীতি সৃষ্টি, এবং ২১, ২৩ ধারায় লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ ও বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়।

অপর দেহরক্ষী আমিনুলের বিরুদ্ধে লাইসেন্সবিহীন (নিবন্ধনের মেয়াদ পার হওয়ার কারণে) অস্ত্র হেফাজতে রাখার অপরাধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারক।

এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ রেখেছেন বিচারক।