এবার ঢাবির হলে ৪ ছাত্রকে পেটাল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার ছাত্রকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা রাতভর নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2020, 03:26 PM
Updated : 22 Jan 2020, 04:00 PM

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাসের মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওই চার ছাত্রকে হলের অতিথি কক্ষে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতারা।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, ওই চার শিক্ষার্থী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই সন্দেহে তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন তারা।

নির্যাতিতরা হ‌লেন- ট্যুরিজম অ্যান্ড হস‌পিটা‌লি‌টি ম্যা‌নেজ‌মেন্ট বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র মুকিম চৌধুরী, রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের সানোয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃ‌তি বিভাগ ২য় বর্ষের ছাত্র মিনহাজ উদ্দিন ও আরবি বিভাগের ২য় বর্ষের আফসার উদ্দিন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিলে পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ছেড়ে দিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মুকিম চৌধুরীকে হলের ‘গেস্টরুমে’ ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতারা। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা শিবিরের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চায়। স্বীকার না করায় মুকিমকে তাদের অনুসারীরা লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।

পরে তার ফোনের ‘চ্যাটলিস্ট’ ঘেঁটে সানওয়ারকে ডেকে নিয়ে তাকেও মারধর করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে তারা নিচে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর মিনহাজ উদ্দীন ও আফসারকেও ধরে আনে আনা হয়। সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ নেতারা। হল প্রশাসন তাদের পুলিশের কাছে তুলে দেয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নির্যাতিত ছাত্র মুকিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতে তাকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে হল সংসদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে কতগুলো ‘স্ক্রিনশট’ দেখায়।

“স্ক্রিনশট দেখানোর পরই আমাকে মারতে শুরু করে। হল সংসদে কিছুক্ষণ মারার পর হলের ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে হল সংসদের সদস্যসহ ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন ছিল। তারা আমাকে পালা করে মারতে তাকে। রাতের ২টা পর্যন্ত হলের ছাদে দফায় দফায় মরধর করার পর আমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে আসে। গেস্ট রুমে হল ছাত্রলীগ নেতা আমির হামজা ভাই আমাকে গেস্ট রুম থেকে বাঁধন অফিসের সামনের করিডরে নিয়ে কিছুক্ষণ পেটায়। হাতুড়ি, ডিসের তার ও স্যানে্ডল দিয়ে তারা আমাকে পেটায়। বাঁধন অফিস থেকে আমার গেস্টরুমে নিয়ে আসে। সেখানে হাউজ টিউটরকেও ডাকা হয়। তার সামনেও মারতে থাকে। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি।

“আমার সামনে যে স্ক্রিনশটগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো শিবির রিলেটেড। নির্দিষ্ট করে শিবিরের কথা ‍উল্লেখ নেই। কিন্তু ওগুলো আমার চ্যাট ছিল না। আমার আইডির লগো দিয়ে ‘স্ক্রিনশট’ বানানো হইছে। ওগুলো ছিল সম্পূর্ণ বানানো, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”

এসময় হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও জিএস তৌফিক, কামাল উদ্দিন রানা, ইমন, আনোয়ার, সোহাগ, শাহীন ও রিফাত সেখানে ছিল।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল্লাহ আব্বাসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য আছে (স্ক্রিনশট) যে তারা শিবিরের কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তখন আমরা তাদের ডাকি।

“আমরা প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলে হলের জিএস আমাদের আবাসিক শিক্ষক বিল্লাল স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে স্যার এসে তাদের থানায় সোপর্দ করে।”

মারধর ও নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিল্লাল স্যার ছিলেন। কোনো মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।”

এবিষয়ে জানতে জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। 

তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “তাদের মারধর করা হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না। আমার সামনে তাদের মারধর করা হয়নি। কোনো জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।“

মারধরের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, “হলের বিষয় আমরা দেখি না। তুমি হল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখতে পার। তাদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিম থানায় দিয়েছে।”

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করেন। কিন্তু তারা কোনো লিখিত অভিযোগ না করায় অভিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আকতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো অবস্থাতেই কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে আঘাত করা গ্রহণযোগ্য নয়। কিভাবে কী হয়েছিল সেটা ক্ষতিয়ে দেখতে হলের প্রভোস্টকে বলেছি।”

মারধরের পর হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের পুলিশে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেন এমনটি হয়েছে সেটাও পরিষ্কার করতে হল প্রশাসনকে বলা হয়েছে।”