পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কী প্রয়োজন, প্রশ্ন অধ্যাপক মিজানের

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায় দেখছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 01:30 PM
Updated : 2 Dec 2019, 01:30 PM

তিনি বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে সরকার। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বলছে ২৪টি ধারা বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।

“কী কারণে দুই তথ্যের এমন তফাৎ? কী কী সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যায়, মন্ত্রণালয় তা ভেবেছে? যদি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে না পারল, তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন কী? সাধারণ জনগণ হিসেবে এ প্রশ্ন করতে পারি।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছর পূর্তিতে সোমবার ঢাকায় ‘জাতীয় নাগরিক উদ্যোগ’ এর আয়োজনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হোক জাতীয় অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক মিজানের এমন মন্তব্য আসে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটে। সেই চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়।

পাহাড়ি জনগণের পক্ষে সেই চুক্তিতে সই করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। সন্তু লারমা নামেই বেশি পরিচিতি এই পাহাড়ি নেতা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান।

চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল ‍তুলে সন্তু লারমা আলোচনা সভায় বলেন, “এ চুক্তি থেকে তিনি নানা সুবিধা আদায় করেছেন। এখন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তিনি আর কোনো সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের দাবি জানিয়ে জনসংহতি সমিতির নেতা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করতে হবে। আইন, স্বরাষ্ট্র, পার্বত্য চট্টগ্রাম বা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হাতে শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা ন্যস্ত করা যাবে না।“

পার্বত্য শান্তি চুক্তি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের দিকটি নিয়ে রাষ্ট্রের তাড়না ‘দৃশ্যমান হচ্ছে না’।

“সেখানে বিভাজনের রাজনীতি তৈরি করে, পাহাড়িদের ঐক্যে ভাঙ্গন তৈরি করে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন চুক্তিটি বাস্তবায়িত না হয়।”

শান্তি চুক্তির ভিত্তিতে পাহাড়ে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৯৯৯ সালে প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও সেই কাজে বিশেষ অগ্রগতি না হওয়ায় ২০০৮ সালে ভূমি জরিপের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আইন সংশোধন না হওয়ায় পাহাড়ি দলগুলোর বিরোধিতায় তা ভেস্তে যায়।

সন্তু লারমার অভিযোগ, “আঞ্চলিক পরিষদের আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধিমালা মন্ত্রিপরিষদের পাঠিয়ে দিয়েছে।”

শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট দাবি ছিল জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, “সরকারের অনেক অনুরোধে তা কেবল মৌখিক চুক্তি হিসেবেই থেকে যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা দিয়েছিলেন, সুবিধাজনক একটি সময়ে তিনি বাঙালি সেটলারদের সমতলে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করবেন। কিন্তু ২২ বছর পরে এসে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের দাবি নিয়ে এতদিন যারা সংগ্রাম করে এসেছেন, সরকার তাদের নানাভাবে ‘প্রলুব্ধ করে বিভক্ত’ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জনসংহতি সমিতির নেতা।

অন্যদের মধ্যে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীণ কণা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং আলোচনায় অংশ নেন।