ঢাকায় এসে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালেন সুবর্ণচরের সেই ধর্ষিত নারী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার নারী ঢাকায় এক কর্মসূচিতে এসে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2019, 11:45 AM
Updated : 25 Nov 2019, 01:43 PM

পারুল আক্তার নামে এই নারী বলেছেন, কারাগারের ভেতরে থাকা এবং জামিনে বাইরে থাকা আসামিরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

সারাদেশে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘আমরাই পারি’ জোটের পক্ষ থেকে সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতীকী অনশনে এই অভিযোগ করেন ওই নারী।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বিতণ্ডার জেরে রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামের নারী পারুল।

তিনি অনশন কর্মসূচিতে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেন; ধর্ষণের এই ঘটনায় তার স্বামীই মামলাটি করেন।

এই নারী বলেন, “স্বামী-সন্তানকে নিয়ে আমি এখনও নিরাপদে নেই। আসামিরা জেলে এবং জেলের বাইরে থেকে আমাকে হুমকি দিচ্ছে, আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, যাতে মুখ খুলতে না পারি।

“আমার সাক্ষীদের ওরা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। তাদের ওরা সাক্ষি দিতে মানা করছে; বলছে, সাক্ষি দিলে পারুলের মতো করবে। এখন আমি সরকারের কাছে এর ন্যায়বিচার চাই।”

আলোচিত এই ধর্ষণের মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ নেতা (বহিষ্কৃত) রুহুল আমিনসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে। তিনি চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।

রুহুল আমিনের সহযোগীরা এই ধর্ষণকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী অভিযোগ করেন, ধর্ষণের পর চিকিৎসা নিতে জেল সদরে যেতে তাকে বাধা দিয়েছিলেন রুহুল আমিন।

ধর্ষণ ও সকল প্রকার যৌন সহিংসতা বন্ধের দাবিতে সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার পারুল আক্তার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও পাননি জানিয়ে পারুল বলেন, “এখন কেউ আমার খোঁজ-খবর নেয় না।”

অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার জাকিয়া সুলতানা রূপার ভাই হাফিজুর রহমান।

অশ্রু নয়নে তিনি বলেন, “অনেক কষ্টে করে বোনকে পড়ালেখা করিয়েছি। সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতো। কী দোষ ছিল তার?” 

নিম্ন আদালতে বিচারে চারজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের যাবজ্জীবন রায় হলেও তা আপিলে ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন রূপার ভাই।

“বিচারটা অনেকদিন যাবত হাই কোর্টে ঝুলে আছে। আমরা আজ পর্যন্ত শুনানির তারিখও পাইনি। কবে হবে এই বিচার? আসলে বিচারটা পাব কি না? আর উচ্চ আদালতে এই রায় বহাল থাকবে কি না? সেটাও আমার সংশয়।”

‘আমরাই পারি’র চেয়ারপারসন, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “দেশে যে পরিমাণ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, তারমধ্যে কিছু মানুষ মাত্র আজকের অনশনে জড়ো হয়েছে। কিন্তু গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমাদের গা শিউরে উঠার কোন উপায় নেই।

“শুধু গত ১০ মাসে পাঁচ হাজারের উপর নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ পরিসংখ্যান শোনার পরও আমরা কেন প্রতিবাদী হয়ে উঠিনি? কারণ আমাদের মানসিক অবস্থা এমন হয়েছে যে, বিচার চাইলেও পাব না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময় এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, বিভিন্ন জায়গায় কথা বলছি, কিন্তু নির্যাতন বেড়েই চলছে। এর প্রধান কারণ আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি।”

এই কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে আমরা প্রতীকী অনশন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান দিতে চাই যে, নারী সহিংসতার ঘটনায় আমরা বিক্ষুব্ধ, ক্ষুব্ধ, আমরা ভীষণভাবে শোকাহত।”

সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচি চালিয়ে জোটের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল সারাদেশে সব ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেবে বলে আয়োজকরা জানান।