জলবায়ু: জোরাল পদক্ষেপ নিতে নেপাল-বাংলাদেশ মতৈক্য

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং এই সমস্যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে জোরাল পদক্ষেপ নিতে একমত হয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশ।

সাজিদুল হক কাঠমান্ডু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 06:35 PM
Updated : 13 Nov 2019, 06:37 PM

বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কাঠমান্ডুতে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারির সঙ্গে বৈঠক করতে ‘শীতল নিবাসে’ (প্রেসিডেন্সিয়াল হাউজ) যান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও নেপালের প্রেসিডেন্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এ বিষয়ে জোরাল পদক্ষেপ নিতে একমত পোষণ করা হয়েছে।”

বিদ্যা দেবীর আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে মঙ্গলবার নেপাল পৌঁছান আবদুল হামিদ। বুধবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল-প্রচন্ডসহ রাজনৈতিক নেতারা সাক্ষাৎ করেন আবদুল হামিদের সঙ্গে।

প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, “দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি বলেন, জলবায়ু পবির্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা বাংলাদেশ ও নেপালের জন্য বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে উভয়ের একসাথে কাজ করা উচিত এবং আন্তর্জাতিক  ফোরামে জোরাল পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

“নেপালের প্রেসিডেন্টও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।” 

এর আগে রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য নেপালের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ নেপালের ১৩ জনকে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা দিয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, নেপাল বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলো বিশেষ করে মংলা বন্দর ব্যবহার করে তাদের বাণিজ্য ত্বরান্বিত করতে পারে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ও নেপাল মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ)  সম্পাদনের মাধ্যমে কানেক্টিভিটি বাড়াতে পারে। এতে উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে।

আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য ছিল ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, সেখানে ২০১৮ সালে তা ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষের ডিউটি ফ্রি সুবিধা চালু এবং ট্যারিফ বেরিয়ার দূর করা গেলে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।”

বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য বৈষম্যের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ট্যারিফ বেরিয়ার তুলে দিলে এবং ডিউটি ফ্রি সুবিধা বাস্তবায়ন করা গেলে বাণিজ্য বৈষম্য কমে আসবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে পারে।”

রাষ্ট্রপতি এ সময় উভয় দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে।

“এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ অঞ্চলকে এক সময় অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”

এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে নেপালের জোরালো সমর্থন আশা করেন তিনি।

প্রেস সচিব জানান, “আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বলেন, নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক এবং এই সম্পর্ক ‘সমস্যাবিহীন’। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দিন থেকে এই সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সম্পর্কে কোন ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্ব’ নেই।

“নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবিক দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার হলেও সম্পর্ক অন্তরের।”

আজারবাইজানের বাকুতে ১৮তম ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতেই দুই দেশের সম্পর্ক কত গভীর সেটা প্রতিফলিত হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা নেপালের অগ্রযাত্রায় কাজে লাগাতে চায়।

বাংলাদেশের শিক্ষাখাতের উল্লেখ করে বিদ্যা ভান্ডারী বলেন, বাংলাদেশে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বাড়েনি। একইসঙ্গে মানও বৃদ্ধি পেয়েছে।

নেপালি শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান বিদ্যা দেবী।

‘ল্যান্ডলক’ দেশ নেপালের অসুবিধা দূর করতে বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রশংসা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ও নেপালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে দুই দেশের যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন বিদ্যা। 

নেপালের প্রেসিডেন্ট আকাশ, সড়ক, রেলপথে যোগাযোগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহের কথা তুলে ধরেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ওই বিমানবন্দরের উন্নয়নে বাংলাদেশ কাজ করছে।

দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান উপস্থিত ছিলেন।