বালিশকাণ্ডে গণপূর্তের সাত প্রকৌশলীকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবুর রহমানসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 01:09 PM
Updated : 11 Nov 2019, 01:09 PM

অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া বাকি ছয় প্রকৌশলী হলেন- রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম ও মো. রওশন আলী, রাজশাহী সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আহসানুল হক ও খোরশেদা ইয়াছরিবা।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ ৩৩ প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক।

৬ নভেম্বর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, তাহাজ্জুদ হোসেন ও মো. মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামারুজ্জামান, মো. আবু সাঈদ ও মো. ফজলে হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

৭ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশল মো. শফিকুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দি, মো. শাহীন উদ্দিন ও মো. জাহিদুল করিমকে।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলের গণপূর্ত বিভাগের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আগেও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। শুধু কাগজপত্র দেখেই সবকিছু নির্ণয় করা যায় না, যেগুলো রেকর্ডে আছে সেগুলোকে ভেরিফাই করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন বলে তাদের ডাকা হয়েছে।”

১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা যাদের বক্তব্য গ্রহণ করবেন, তা যথেষ্ট কিনা তা দেখবেন। এছাড়া যেসব নথিপত্র পাওয়া গেছে সবকিছু মিলিয়ে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।”

১২ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন, শাহনাজ আক্তার, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান ও মো. রওশন আলী এবং রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মকলেছুর রহমানকে।

আর ১৩ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শৌকত আকবর, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. হাসিনুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব রহমান, মো. মেহেদী হাসান এবং পাবনা গণপূর্ত বিভাগের মো. রফিকুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় গত ১৭ অক্টোবর দুদক নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে।

এই অনুসন্ধান দলের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ভবনে উত্তোলন কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৯ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা, আর আর সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা দেখানো হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের কথা উঠে আসে। হাই কোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪ জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়।