‘আনন্দময়ীর’ বিদায় বেলা

‘বাবার বাড়ি বেড়ানো’ শেষে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফেরার সময় হল ‘আনন্দময়ী’ দেবী দুর্গার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2019, 09:04 AM
Updated : 8 Oct 2019, 01:36 PM

ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় বাঙালি হিন্দুর যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হল বিজয়া দশমীতে।

ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, মঙ্গলবার সকালে বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটেছে।

সিঁদুর খেলার পর এখন চলছে দেবীকে বিদায় জানানোর আয়োজন। মণ্ডপে মণ্ডপে তাই বিষাদের সুর।

‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা।

সকালে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেবী দুর্গার চরণে ভক্তদেরকে শেষ মুহূর্তের প্রার্থনা জানাতে দেখা যায়। মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে পুষ্পাঞ্জলি আর ভোগ দেন তারা।

বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখান থেকে বিজয় শোভাযাত্রা নিয়ে ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন। শেষ হবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবের।

পুরোহিতরা জানান, ওয়াইজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন শেষে মন্দিরে ‘শান্তির জল’ নিয়ে আসা হবে; সন্ধ্যায় মণ্ডপে হবে ‘আশির্বাদ প্রদান’।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, আশ্বিন শুক্লপক্ষের অমাবস্যার দিন হয় মহালয়া, সেদিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।

এবার সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন শনিবার এবং ফেরার দিন মঙ্গলবার হওয়ায় শাস্ত্রমতে দুর্গা এবার এসেছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে, একই বাহনে তিনি ফিরবেন।

দুর্গার ঘোড়ায় চড়ে এলে বা গেলে তার ফল হয়- ‘ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে’। অর্থাৎ- সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, “মায়ের ঘোড়ায় চেপে আসা অমঙ্গলের লক্ষণ। কিন্তু আমরা প্রার্থনা করেছি, করুণাময়ী মা যেন সব অকল্যাণ থেকে আমাদের গোটা পৃথিবীকে রক্ষা করেন।”

পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে পূজা হয়েছে ২৩৭টি মণ্ডপে।

মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, “বরাবরের মতো এবারও দুপুরের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমা নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসছেন পূণ্যার্থীরা। ৩টার দিকে বিজয়া শোভাযাত্রা নিয়ে ৪টার দিকে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন হবে।”

এছাড়া বনানী পূজামণ্ডপ থেকে আরেকটি শোভাযাত্রা গুলশান ২ নম্বর, ১ নম্বর, মহাখালী, বিমানবন্দর ও উত্তরা হয়ে তুরাগে যাবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত জানান।