ঢেকে রাখলে লাভ হত না: রাজ্জাক

জুয়ার আখড়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা ধরা পড়লেও তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়ে বরং বাড়বে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

জ্যেষ্ঠ  প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 12:02 PM
Updated : 22 Sept 2019, 12:06 PM

“আমি মনে করি যেটা করা হচ্ছে, এটা ঢেকে রাখলে লাভ হত না,” বলেছেন তিনি।

অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানের মধ্যে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।

সম্প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতাকে বরখাস্তের সময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের এক বৈঠকে যুবলীগের চাঁদাবাজি নিয়েও কথা বলেন।

তার ওই কথার পর ঢাকার কয়েকটি ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে ক্যাসিনো পরিচালনায় যুবলীগের বিভিন্ন নেতার নাম প্রকাশ পায়; দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

চাঁদাবাজি বন্ধে শেখ হাসিনা যে কতটা কঠোর, তা দলের ওই বৈঠকে থেকেও বুঝতে পারেননি রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “ওই মিটিংয়ে উনি একদিন আমাদের বলেছেন, আমরা অতটা বুঝতে পারিনি। দু’একটা সংগঠনের নামও বলেছে।

“ওখানে বলা হয়েছিল, একটি সংগঠন আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করে ৩০ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। উনি শুনে আরও ক্ষিপ্ত হয়েছেন, বলেছেন যে ‘চাঁদাবাজি করে আমার দীর্ঘায়ু কামনা করলে কী লাভ হবে? মানুষ আমার জন্য বদ দোয়া করবে, আল্লাহও খুশি হবে না’।”

যাদের অপকর্ম সরকারের উন্নয়ন ম্লান করে দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কঠোর বার্তার কথাও জানান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজ্জাক।

“এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এত কঠোর পরিশ্রম করি বাংলার ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য। সেগুলোকে যারা ম্লান করছে তাদের সাথে কোনো রকমে আপস করা নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি কিছু কিছু আমার নাম ভাঙ্গিয়ে আমাকে ব্যবহার করে অনেক অপকর্ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। তাদের সকলকে আইনে আওতায় আনা হবে।”

ফকিরাপুলের এই ক্যাসিনোটি চালাতেন যুবলীগ নেতা ফারুক ভূইয়া

এই অভিযানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ধরা পড়ায় তা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় মুখর এখন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, এটা দুর্নীতির খণ্ডচিত্র মাত্র।

এই অভিযান আওয়ামী লীগ কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন  কি না- প্রশ্ন করা হলে রাজ্জাক বলেন, “আমি মনে করি না ইমেজের কোনো ক্ষতি হবে। বরং আমাদের ভাবমূর্তি বাড়বে, মানুষের আস্থা বাড়বে।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “ধুলাবালি, ময়লা, গন্ধ ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে যদি রেখে দেন, কেউ দেখবে না; তাতে কি ধুলাবালির অপকার থেকে আপনি রেহাই পাবেন? উট পাখি বালির মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিলেও তীব্র রোদ থেকে রেহাই পায় না।”

দুর্নীতির অনেক অভিযানের মধ্যে এই অভিযান লোক দেখানো বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

এনিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আই ওয়াশ করে তো বাংলাদেশের মানুষকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। দেশের মানুষ খুবই সচেতন।”

এ অভিযান চলমান থাকবে কি না- জানতে চাইলে এই মন্ত্রী বলেন, “এটা চলমান, গতকালও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন।”

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সামনে বড় শুদ্ধি অভিযান চালাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অপেক্ষা করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী; অবশ্যই।”

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক

অপকর্মে জড়িত ২৭ জন মন্ত্রী-এমপির তালিকা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তার সত্যতা জানতে চাইলে রাজ্জাক সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, “কারও বিরুদ্ধে যদি ডেফিনিট কোনো প্রমাণ থাকে, অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।”

দুর্নীতি নির্মূলে সরকার সচেষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুদক তদন্ত করছে।”

দুর্নীতি বন্ধে সরকারি দপ্তরগুলো ডিজিটাইজেশনের  বিষয়টি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “দেশের যে উন্নয়ন হয়, তার ৮০ ভাগ খরচ হয় টেন্ডার ও প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে, সেখানে তো দুর্নীতির উৎস। সেই প্রকিউরমেন্ট ডিজিটালাইজড করেছি।”

চলমান অভিযানে গ্রেপ্তর হওয়া জি কে শামীমের অনেক সরকারি কাজ পাওয়ার কথা জানালে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর ইউনির্ভাসিটির কাজ ই-টেন্ডারিং এ হয়েছিল। এ কারণেই জাহাঙ্গীরনগরে সফল হয়নি।

“শামীমের কথা বলছেন, সিস্টেমগুলো শুরু হয়েছে, একটু হয়ত সময় লাগবে। সিস্টেমগুলো আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।”