শুধু চেক দেন উনি

প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ও মালামাল হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2019, 02:41 PM
Updated : 12 Sept 2019, 04:02 PM

মশিউর রহমান (৪৪) নামে এই ব্যক্তিকে বুধবার রাতে ঢাকার সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মশিউর একজন ব্যতিক্রমী প্রতারক। তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা আছে। এসব মামলার বিপরীতে পাঁচটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তার স্ত্রী শাবরিনা রহমানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওয়ালটন, এলজি বাটারফ্লাই, বেঙ্গল গ্রুপসহ বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, টিস্যু, সিমেন্ট, চাল নিয়ে কয়েক দিন লেনদেন ঠিক রেখে বিশ্বাস স্থাপন করে ভুয়া চেক দিয়ে নিরুদ্দেশ হন মশিউর। এসব প্রতিষ্ঠান তার কাছে প্রায় ৪০কোটি টাকা পাবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

মশিউর ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এসব প্রতারণার ঘটনা ঘটান জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “প্রতারণার পরিকল্পনা নিয়ে নওগাঁ এলাকায় সে একটা চালের কলও ভাড়া নিয়েছিল। সেখানকার চাল মালিকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে কোটি টাকার চাল বাকিতে নিয়ে সটকে পড়ে।”

মশিউরকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ছুটে যান সাহাদত হোসেন নামে ওয়ালটনের একজন কর্মকর্তা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বাস স্থাপন করে আমাদের কাছ থেকে ৮০টি ফ্রিজ কেনে মশিউর। এসব ফ্রিজের বিনিময়ে নগদ ৭ লাখ টাকা এবং প্রায় ১২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক দেয়। কিন্তু সেই চেক দিয়ে আর টাকা পাওয়া যায়নি। তার যে অফিস ছিল সেটাও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করা হয়। সে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।”

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা শাহিদুর জানান, অবসরপ্রাপ্ত দুজন মেজরও তার কাছে প্রতারিত হয়েছেন। তারা চালের ব্যবসা করেন। মশিউর তাদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার চাল নিয়ে চেক দিয়ে কেটে পড়েন। অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না থাকায় ব্যাংক চেক প্রত্যাখ্যান করে।

মিলন হাওলাদার নামে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী রং মিস্ত্রির প্রায় এক লাখ টাকাও মশিউর আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, মশিউর অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামে এসব প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি কখনও প্রতিষ্ঠানের মালিক, আবার কখনও ব্যবস্থাপক পরিচয় দিতেন। তার এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আবরার এন্টারপ্রাইজ, জাহান গ্রুপ বিজনেস, দীপা প্যাসিফিক, স্বপ্ন ট্রেডিং, ছোঁয়া ট্রেডিং এজেন্সি ইত্যাদি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, একবার নওগাঁ এলাকায় বিপুল পরিমাণ ভুট্টা কেনেন মশিউর। বাজারদরের চেয়ে কেজিতে অন্তত ৪ টাকা বেশি দামে কেনার পর অর্ধেক বিল চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। পরে ট্রাকে করে ভুট্টা নিয়ে নওগাঁ থেকে বের হওয়ার পর কেনার চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দেন তিনি। ওই ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে আর চেকের টাকা পাননি।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, “তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে। সেই সাথে তার অফিসের সাজসজ্জা এমন থাকে যেন কেউ অবিশ্বাস করতে না পারে।নতুন করে প্রতারণার একটি তথ্য পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে প্রতারণার ফাঁদ পাততে সবুজবাগ এলাকায় নতুন করে অফিস খোলার চেষ্টা করছিল।”