মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শিশু সম্মেলনে এসে নগরের খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারে নিজের ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকারের পাশাপাশি সেই বাধা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
যৌথ ‘শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয়’ প্রতিপাদ্যে যৌথভাবে এই শিশু সম্মেলনের আয়োজন করে সেইভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এবং সোশাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)।
রাজধানীর ২৫টি স্কুল থেকে প্রায় ৭০০ শিশু এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল।
শিশু সম্মেলনে উপস্থিত অনেকেই অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে নগরে বিভিন্ন মাঠের দখল নিয়ে আছে।
দুজন আলোচক নগরে মাঠের দখলদারিত্বের চিত্র তুলে ধরলে তার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আতিক বলেন, “অনেক ইচ্ছা আছে… নগরে আরও নতুন কিছু মাঠ করা দরকার।
“মাঠ উদ্ধার করতে গিয়ে কিন্তু প্রতিবন্ধকতাও আছে... কিছু মাসলম্যান দাঁড়িয়ে যায়। তারা প্রতিবাদ করতে থাকে।”
তবে এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অভয়’ পেয়েছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, এবার যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক, মাঠে সব অবৈধ স্থাপনা ‘ভেঙে-গুঁড়িয়ে’ দেবেন।
সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর আধুনিকায়নে শিশুদের খেলার মাঠ নির্মাণ করাই প্রথম কাজ বলে জানান তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে যে নতুন সড়ক নির্মাণের করা হচ্ছে সেখানে ৯ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার শিশুদের সাইকেল লেইন হিসেবে রাখা হবে জানান মেয়র।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মো. খান বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ১৪১টি মাঠ দখলে রেখেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান, ২৪টি মাঠ পড়েছে সরকারি আবাসিক এলাকায়। ১৬টি ঈদগাহ মাঠও রয়েছে এর মধ্যে, যেগুলোতে খেলতে পারে শিশুরা।
‘প্রতি সাড়ে ১২ হাজার নাগরিকের জন্য ২-৩টি মাঠের প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
আদিল বলেন, রাজধানীতে ৯৫ হাজার ১৩৪ একর জায়গার মধ্যে শতকরা ৮৪ ভাগ এলাকাতে খেলার মাঠ নেই। ৫৬ ভাগ ছেলে শিশু খেলার মাঠ পায় না, অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের মধ্যে মাত্র সাত ভাগ খেলার মাঠ পায়।
রাজধানীর পরিত্যক্ত মাঠ ও পার্ক নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ ‘জলসবুজ ঢাকা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হলেও শতকরা ৬০ ভাগ শিশু পায়ে হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠে যেতে পারবে না বলে মনে করেন আদিল।
শিশুদের খেলার মাঠ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, “নগরে যে পরিমাণ মাঠের দরকার তা হয়ত পাওয়া যাবে না। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ করেও শিশুদের জন্য খেলার মাঠ করা যেতে পারে।
“খেলার মাঠ করলে শিশুদের বিনোদন ও স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে না। বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা যেগুলো আছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিৎ করতে হবে।”
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, “রাজধানীতে বায়ু দূষণের কারণে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু এখন ফুসফুসের সক্ষমতা হারাতে বসেছে, অল্প বয়সেই মোটা হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। পাশাপাশি নিরাপত্তার অভাবে শিশু নির্যাতনের প্রবণতাও বাড়ছে।”
সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান বলেন, “শিশুদের যদি আমরা সব দিক থেকে চাপমুক্ত রাখতে পারি, তবেই তার মধ্যে সব প্রতিভার স্ফূরণ ঘটতে শুরু করবে।”
শিশু সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) শামসুদ্দীন চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লাহ খন্দকার, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান।