‘যেতে হবে অনেক দূর’

জন্মের ৪৮ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়ালেও যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা জাতি, তা পূরণে আরও বহু পথ পাড়ি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 06:42 PM
Updated : 26 March 2019, 02:33 AM

আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সেই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৫ মার্চ কালরাত স্মরণ করে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার গৌরবময় স্বাধীনতা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ।

জাতীয় এই দিবসের বাণীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান।

২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চলেছিল গণহত্যা।

এই আক্রমণ বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধের পথ তৈরি করে দেয়; পাকিস্তানের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করে দেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীন।

পাকিস্তানিরা বন্দি করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র সেই সংগ্রামে বাঙালির বিজয় বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটায় নতুন দেশ বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ষড়যন্ত্রের জালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা শুরু হলেও কয়েক দশক বাদে ক্ষমতায় ফিরে বাংলাদেশকে পথে ফেরানোর দায়িত্ব নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ।

উচ্চ প্রবৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠা, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা সূচকে অগ্রগতির পর বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে পৌঁছানো।

কালরাত স্মরণে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আলোর মিছিলে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।

এই অগ্রগতি মনে রেখেই স্বাধীনতা দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, “স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। উন্নয়নকে জনমুখী ও টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহ করতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

জনকল্যাণে সরকারের উন্নয়ন ভাবনাসমূহের বাস্তবায়নে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার উপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল।

“আসুন, দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। গড়ে তুলি জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। আজকের এ ঐতিহাসিক দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় জয়ে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব।”

মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানায় গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নানা আয়োজন

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মত এবারও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রত্যুষে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে এ দিবসের সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেন।

এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে ফুল দেন। পরে সবার জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের দুয়ার।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় সকাল ৮টায়। একই সময় সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের এই শিশু-কিশোর সমাবেশে ১০-১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা ২০১৯ এর বিজয়ী দলসমূহকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোকিত রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

সাধারণ এই ছুটির দিনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোও সাজানো হয়েছে পতাকায়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌ পথে শিল্পীরা দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করবেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করেছে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো থাকবে উন্মুক্ত।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে ।

দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যত্নকেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা  ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো বেলা ২টা হতে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।