একচোখা হয়ে উচ্চকণ্ঠ টিআইবি: দুদক চেয়ারম্যান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) ‘একচোখা’ বললেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2019, 01:54 PM
Updated : 5 March 2019, 01:54 PM

টিআইবি’র কার্যক্রমের সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডি, সুইডিশ ও ডেনিশ দূতাবাসের জেনেভাভিত্তিক নীতি-কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বস নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলকে নিজের এই মূল্যয়ন জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করে জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কাজ নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল প্রতিনিধি দলটি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, “জনগণের মাঝে টিআইবির ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে এর কিছু সমালোচনাও শোনা যায়। টিআইবি দেশের শাসন প্রক্রিয়া তথা সরকার বা সরকারি সংস্থার যে কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই উচ্চকণ্ঠ থাকে।”

“শুধু সমস্যা বা ত্রুটি তুলে ধরা টিআইবির কাজ হতে পারে না, বরং এসব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার সুযোগ তাদের রয়েছে। সমস্যা শনাক্তকরণের পাশাপাশি এর কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হওয়া উচিৎ,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশে সরকারে যেই থাকুক না কেন, টিআইবির পর্যবেক্ষণ নিয়ে বরাবরই সমালোচনামুখর থাকে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও দাবি করে আসছেন, টিআইবি একচোখা ।

দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে টিআইবির সমালোচনাকে সবসময় সাধুবাদ জানানোর কথা বলে প্রতিনিধি দলকে জানান ইকবাল মাহমুদ।

সেইসঙ্গে তিনি বলেন, “তবে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থার সমালোচনা করতে হলে তাদেরকে দেশের সমসাময়িক বাস্তবতা, পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে হবে।

“সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কোনো ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিৎ। তাদের একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।”

টিআইবির গবেষণার মূল্যায়ন করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “গবেষণার মেথডোলোজি স্বচ্ছ হতে হবে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাধ্যমিক ডাটা ব্যবহার করে অথবা ফোকাস গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করে। তাদের উচিৎ প্রাথমিক ডাটা ব্যবহার করা। তাহলে তাদের গবেষণার ফলাফল ও  বিশ্লেষণে ত্রুটি কম থাকবে এবং তাদের প্রতিবেদনের  বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।”

টিআইবির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি থাকা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক সচিব ইকবাল মাহমুদ।

তিনি বলেন, “সব বিষয়ে টিআইবি’র কথা বলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভাবমূর্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা উচিৎ।

“তারা দুর্নীতি, মেগাপ্রজেক্ট এবং সরকার নিয়ে যতটা উচ্চকিত, আবার মানসম্মত শিক্ষা, জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিসহ সুশানের অন্য যে সকল সূচক রয়েছে এগুলোর ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমকে অনেকেই ততটা জোরালো বলে মনে করেন না।”

বিদেশি সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “সরকারি-বেসরকারি এমনকি বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত প্রতিটি সংস্থারই অর্থের মালিক জনগণ। তাই টিআইবিসহ প্রতিটি সংস্থার বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ থাকা উচিত। তাদের আয়-ব্যয়, কর্মপরিকল্পনা, অডিট কার্যক্রম শুধু ওয়েবসাইটে না রেখে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমেও মানুষকে অবহিত করা উচিত।”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “টিআইবি যাদের অর্থায়নে পরিচালিত হয় তাদের অবশ্যই প্রত্যাশা থাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সুশাসনের উন্নয়নে টিআইবি ভূমিকা রাখবে।”

এই বৈঠকে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর সাদিকও ছিলেন।

দুদকের সঙ্গে টিআইবির আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক  উভয় প্রকার সম্পর্ক থাকার কথাও প্রতিনিধি দলটিকে জানান ইকবাল মাহমুদ।

“তবে অনানুষ্ঠিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা বেশ ফলপ্রসূ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাথে কমিশনের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং উত্তম চর্চার বিকাশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকেই টিআইবির সাথে যৌথভাবে গণশুনানিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।”