বাংলাদেশের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে বিশ্ব: হাসিনা

দেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে সারা বিশ্ব ‘বিস্ময়ে’ তাকিয়ে থাকবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2019, 01:17 PM
Updated : 24 Feb 2019, 01:22 PM

রোববার চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ ও নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর পতেঙ্গায় সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। এক সময় শুনতে হত, বাংলাদেশ মানেই দুর্ভিক্ষের দেশ। বাংলাদেশ মানেই ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বাংলাদেশ হলেই একটা নেগেটিভ কথা।

“এটা হতে পারে না। সেই দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু নেই।”

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে দুই অংকের ঘরে নেওয়ার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেসব কাজ হয়ত অনেকে চিন্তাই করতে পারেনি, আমরা সেই কাজগুলোই করে মানুষের জীবনমান যাতে উন্নত হয় তার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।”

শুধু শহরে নয়, উন্নয়নের ছোঁয়া যেন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “গ্রামের মানুষও যেন শহরের সব সুযোগ সুবিধা পায়।”

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। টেকনাফের সাবরাংয়ে পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে। পটুয়াখালীতেও পায়রা পোর্ট করা হচ্ছে।

“উন্নয়ন পরিকল্পনাটা এমনভাবে নিচ্ছি যাতে সবাই উপকৃত হয়। উত্তরাঞ্চলেও সমানভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। এভাবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।”

কর্ণফুলির তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের বন্দর এলাকার সঙ্গে নদীর অন্য তীরের আনোয়ারা উপজেলাকে সড়কপথে যুক্ত হবে।

এ টানেল চালু হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে বন্দরনগরীর যোগাযোগ আরও সহজ হবে। পাশাপাশি কর্ণফুলীর দুই সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমবে।

সরকার বলছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলা হবে কর্ণফুলীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেইনের এ টানেল হবে দুই টিউব সম্বলিত। পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার এবং পূর্বে চার হাজার ৯৫২ মিটার অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে।

টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার যোগান দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নদীর তলদেশে এ ধরনের টানেল নির্মাণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ কাজে সহায়তার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংসহ অন্য নেতাদের ধন্যবাদ জানান।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য ‘বন্ধুপ্রতীম’ দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই দেশের জনগণ সারা বিশ্বে যাতে সম্মান নিয়ে চলতে পারে সেই লক্ষ্যেই সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে।”

দেশের প্রায় প্রতি এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামেও বিশাল আকার নিয়ে আর্থনৈতিক অঞ্চল করে যাচ্ছি। কক্সবাজার যেন পরিকল্পিতভাবে পর্যটন শহর হিসাবে গড়ে ওঠে সেই কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।”

চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করার উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।