‘নোবেল বিজয়ী আর এডিটররা’ মিলে বদনাম ছড়ায়: প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক ও সরকারের টানাপড়েনের সময় নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস এবং দুই পত্রিকার সম্পাদক ‘মিথ্যা অপপ্রচারে’ লিপ্ত হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2019, 09:37 AM
Updated : 24 Feb 2019, 12:17 PM

নিজের নামে পদ্মাসেতুর নামকরণের প্রস্তাব এলেও কেন তা করেননি, সেই ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের খনন কাজ এবং বন্দরনগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর রোববার এক সুধী সমাবেশে পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর নাম রাখতে চেয়েছিলেন ‘শেখ হাসিনা সেতু’। কিন্তু তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন, কারণ এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ‘অনেক মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারের’ শিকার হতে হয়েছে তাকে।

“দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দেশের লোক আমাদের বদনাম করে। আমাদের দুটি স্বনামধন্য পত্রিকার যারা এডিটর প্লাস মালিক, সাথে আপনাদের চট্টগ্রামের এক সন্তান আছে, নোবেল..., সুদের ব্যবসা করে জনগণের টাকা খেয়ে... সেই সুদখোর আর এডিটররা মিলে গিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার।

“আর হিলারি ক্লিনটনের (সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছে ইমেইল পাঠিয়ে পাঠিয়ে নানাভাবে যোগাযোগ করে। কাজেই পদ্মা সেতুকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম।”

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়।

সেই ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ যখন পদ্মাসেতুতে মনোযোগ দিল, বিশ্ব ব্যাংকই উৎসাহ দেখিয়েছিল সবচেয়ে বেশি।

“এত উৎসাহ নিয়ে এসে তারা হঠাৎ মাঝামঝিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনল। তখনও কোনো টাকা ছাড় করে নাই, তো দুর্নীতিটা হল কোথায়? তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। তারপর বলল দুর্নীতি হয়নি, তবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।

“আমি আবার চ্যালেঞ্জ দিলাম- কোথায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারা একটা ছোট কাগজ বের করল- যে এখান থেকে ওমুক এত পারসেন্ট পাবে, ওমুক এত পারসেন্ট পাবে…। এভাবে তারা নানা অপপ্রাচার চালাতে শুরু করে “

সে সময় বিশ্ব ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বাংলাদেশে এসে তদন্ত চালানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে তারা আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাত। আমি নাকি বাংলাদেশে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক, এবং আমার পুরো পরিবার দুর্নীতিগ্রস্ত। আমার নাম নিয়ে বলত তারা। পদ্মাসেতুর টাকা নাকি আমরা লুটে খেয়েছি।”

সেসব অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে তার প্রমাণ হাজির করতে বলেছিলেন তিনি। তার উপদেষ্টা মসিউর রহমান প্রমাণ চেয়ে বার বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু দুর্নীতির কোনো প্রমাণ বিশ্ব ব্যাংক দিতে পারেনি।

“মাঝে মাঝে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আসত, সাথে একজন অফিসার নিয়ে। হাতে একখান ব্যাগ বগলদাবা করে বসে থাকত। আর বলত দুর্নীতি হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে।

“আমি বললাম আপনার ব্যাগের মধ্যে কী কাগজ আছে, বের করেন, দেখান্ আমি দেখতে চাই যে কী দুর্নীতি হয়েছে, কে দুর্নীতি করেছে। আমি কী দুর্নীতি করেছি আমি সেটা দেখতে চাই। তারা বলে, এখন নেই… পরে দেব। পরে আমাদের চাপাচাপিতে একবার দুইখানা চিঠি পাঠাল।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া সেই চিঠি ছিল ২০০২ সালের, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। চিঠিতে যার নাম ছিল তিনি ছিলেন ‘বিএনপির মন্ত্রী’। দুর্নীতির যে অভিযোগ সেখানে ছিল, তার একটা ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক, অন্যটা সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন নিয়ে। পদ্মা সেতুর কোনো যোগাযোগ সেখানে ছিল না।

“কানাডার আদালতে একটা মামলা হয়। কিন্তু সেই মামলায় দুর্নীতির কোনো প্রমাণ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দেখাতে পারেনি। মামলার রয়ে বলে দেওয়া হয় যে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, যা যা বলা হয়েছে সব ভুয়া এবং বানোয়াট।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ওই অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনে দুই বছর নষ্ট হয়। অনেকের ধারণা ছিল বিশ্ব ব্যাংককে ছাড়া পদ্মা সেতু সম্ভব না। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পেরেছে।

“পদ্মা সেতু নিয়ে যেহেতু এতকিছু হয়ে গেছে, এটা ‘পদ্মা সেতুই’ থাকবে। এটার সঙ্গে আর কোনো নতুন নাম যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নাই।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “আমার বাবা এই দেশের জন্য সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন। আমার মা কষ্ট করেছেন। এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য তিনি কষ্ট করে গেছেন। … দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব-যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু নয়।”

কর্ণফুলী টানেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই দেশের জনগণ সারাবিশ্বে যাতে সম্মান নিয়ে চলতে পারে সেই লক্ষ্যেই সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে।”