এবার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের একদল শিক্ষার্থী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2018, 06:52 AM
Updated : 8 Dec 2018, 09:59 AM

শনিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এই শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচিতে থাকা একাদশ শ্রেণির ক্যাপ্টেন আনিকা ইশরাফ ইক্বরা সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক হাসনা হেনাকে মুক্তি না দিলে তারা রোববার থেকে ক্লাস বর্জন করবেন।

ভিকারুননিসনা নূন স্কুল ও কলেজে বর্তমানে একাদশ শ্রেণির ক্লাস চলছে। অন্য শ্রেণিগুলোতে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা।

অরিত্রী আত্মহত্যা করার পর শিক্ষার্থীদেরই বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই শিক্ষার্থীর বাবার করা মামলায় গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল হাসনা হেনাকে। অরিত্রীর এই শ্রেণিশিক্ষক এখন কারাগারে রয়েছেন।

অরিত্রী ও তার বাবা-মাকে ‘অপমানের’ বিচার দাবিতে টানা কয়েকদিন ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের আশ্বাসে ঘরে ফেরে।

এরপর শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে  ‘ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে আরেকদল শিক্ষার্থী। শুক্রবারের পর শনিবারও তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।

দুই ঘণ্টার বেশি অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দুপুর দেড়টার পর রাস্তা ছাড়েন তারা।

এ সময় ছাত্রীদের পক্ষে ব্রিফিংয়ে রোববার থেকে ক্লাস বর্জনের সঙ্গে ওই দিন সকাল ৮টা থেকে স্কুলের সামনে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া মাহমুদ মৃত্তিকা।

তিনি বলেন, “হাসনা হেনা আপা নির্দোষ- এটার সব থেকে বড় প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানে আমরা দেখেছি যে, আপার সঙ্গে অরিত্রীর বাবা বা মায়ের কোনো কথোপকথন হয়নি।

“এছাড়া প্রথম থেকে অরিত্রীর বাবা বা মা হাসনা হেনা আপার কথা বলেননি একবারও। ছয় দফা দাবিতেও হাসনা হেনা আপার নাম কোথাও ছিল না।”

হাসনা হেনার পক্ষে বিক্ষোভকারী এই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বিভিন্ন পোস্টারে লেখা ছিল- ‘হাসনা হেনা আপার মুক্তি চাই’, ‘জাতির কারিগর কেন কারাগারে’, ‘লিখতে শিখিয়েছে যে হাত, সে কেন খাবে জেলের ভাত’ ইত্যাদি।

এই শিক্ষার্থীরা অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ‘সুষ্ঠু বিচার’ চাওয়ার কথা জানিয়েই বলছে, এই ঘটনায় হাসনা হেনার কোনো দায় নেই।

এর আগে অরিত্রীর আত্মহত্যার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল- ‘শাসন করুন, অপমান নয়’, ‘শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষকতা করায়, অপমান করায় নয়’, ‘অরিত্রী হত্যার বিচার চাই’, ‘ভিকারুননিসা আর ভিকারুননিসা নেই, অধ্যক্ষের বরখাস্ত চাই’ ইত্যাদি।

হাসনা হেনার বাইরে অন্য দুই শিক্ষক দোষী কি না, তাও তদন্তের মাধ্যমে বের করার দাবি জানান মৃত্তিকা।

“সিসিটিভি ফুটেজে আমরা উনাদের সঙ্গে কথোপকথন হচ্ছে, এটা দেখেছি। কিন্তু কী কথা হয়েছে, সেটা শুনিনি। তাই আমরা বলতে পারব না, উনারা দোষী না কি নির্দোষ। এটা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের হবে।”

অরিত্রী যে শ্রেণিতে পড়তেন, সেই নবম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক ছিলেন হাসনা হেনা। আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদ, তার এমপিও বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়।

হাসনা হেনার পাশাপাশি ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আখতারও বরখাস্ত হয়েছেন। অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর মামলায় তারও আসামি।

অরিত্রী গত সোমবার আত্মহত্যা করার পর থেকে উত্তেজনা চলছে রাজধানীর নামি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার সময় অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান করেছিলেন’ অধ্যক্ষ। সে কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেন।

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী রোববার বার্ষিক পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকলসহ ধরা পড়েছিলেন।