পানিতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ পরীক্ষার প্রতিষ্ঠান মেলেনি

পানিতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ সব প্রতিষ্ঠানে শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়ে থাকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2018, 03:34 PM
Updated : 25 Nov 2018, 03:35 PM

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে রোববার হাই কোর্টে দাখিল করা পৃথক কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনগুলো দাখিল করা হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে জন্ডিসের জীবাণু ‘হেপাইটাইটিস-ই’ আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে গত ৮ জুলাই হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশে এসব প্রতিবেদন দাখিল করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার জন্য এক মাসের মধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করতে বলে।

হাই কোর্টের এ আদেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামীকে সভাপতি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতে দেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনই রোববার হাই কোর্টে উপস্থাপন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, “পরিবেশ থেকে পানি সংগ্রহ করে তা ঘনীকরণের মাধ্যমে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস (এইচইভি) শনাক্ত করা যায়।

“বাংলাদেশে বর্তমানে এ ধরনের সেবা কোনো প্রতিষ্ঠান দেয় কি না তা আমাদের জানা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগ শুধু রোগীদের রক্তের নমুনা থেকে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্ত করে থাকে।”

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, “জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে পানি থেকে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয় না।”

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, “পানির নমুনা হতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণের প্রযুক্তি আইইডিসিআরে  নেই।”

চট্টগ্রামের বিসিএসআইআর গবেষণাগারের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিসিএসআইআর গবেষণাগার, চট্টগ্রামে পানি হতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি না থাকায় অত্র গবেষণাগারে উক্ত ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা সম্বভব নয়।”

চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, “পানি হইতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা অত্র ল্যাবরেটরিতে বর্তমান অবস্থায় করা সম্ভব নয় এবং ইতোপূর্বেও করা হয় নাই।”

আইনজীবী মহিউদ্দিন মো. হানিফ (ফরহাদ) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত প্রতিবেদনগুলো নথিভুক্ত করে রেখেছেন। রুল শুনানির পর পূর্ণাঙ্গ আদেশে আশা করি, এর একটা সমাধান পাব।”

গত মে মাসে বন্দর নগরীর হালিশহর এলাকায় ডায়রিয়া ও জন্ডিসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর নিরাপদ পানি সরবরাহে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যর্থতাকে দায়ী করে বিভিন্ন সংগঠন ও নগরবাসী।

জুনের শেষে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা যাওয়ার খবর প্রকাশের পর চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তখন পর্যন্ত হালিশহর এলাকায় হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসে ১৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়াও হালিশহরে জন্ডিসের প্রকোপ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এর মধ্যে দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে রিট করেন আইনজীবী মহিউদ্দিন মো. হানিফ (ফরহাদ)।

আদালত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৮ জুলাই রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।

রুলে চট্টগ্রাম সিটির জনগণের জীবন রক্ষায় ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পানি সরবরাহে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, নিরাপদ পানি সরবরাহের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং জন্ডিসে আক্রান্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।