সোমবার ঢাকার গুলশানের লেইক শোর হোটেলে ‘দি এশিয়ান এইজ’ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, কোনো দেশের উন্নয়নে সেই দেশের জনগণের অংশগ্রহণের দরকার হয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, সেই যুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা অংশ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অসাম্প্রদায়িক ভাবনাই চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতের অর্থনীতিবিদক কৌশিক বসুকে উদ্ধৃত করে আতিউর বলেন, “এসবের মূলে রয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক ভাবনা। তার কাছে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো জায়গা নেই। তিনি স্বাধীনতার চেতনার বিশ্বাস করেন বলেই বাংলাদেশের এমন সম্ভব হয়েছে।”
“মুক্তিযদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এজন্য সেই চেতনা আমাদের শিক্ষানীতি, উন্নয়ন নীতি ও বিদেশ নীতি সবখানে থাকতে হবে,” বলেন আতিউর।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে এশিয়ান এইজ পত্রিকার রোভিং এডিটর নাদিম কাদির বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সময় ধর্মের পরিচয়টা বড় ছিল না। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
জঙ্গি ও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে উগ্র ইসলামী গোষ্ঠী হিসেবে জামায়াত ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলাম পরিচিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন হেফাজতে ইসলাম এখন মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল ও যুদ্ধাপরাধে জড়িত জামায়াতে ইসলামের হয়ে কাজ করছে। এটা আমাদের সবাইকে চিন্তিত করছে।”
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার দিকটি তুলে ধরে বলেন, “এটা বর্তমান সরকারের অসাম্প্রদায়িক ভাবনারই প্রতিফলন।”
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরীও বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের অসাম্প্রদায়িক ভাবনার কারণেই তারা (রোহিঙ্গা) এখানে অবস্থান করছেন। আমরা পরিপূর্ণ এটা দাবি করছি না, তারপরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উদাহরণ।”
কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বিদেশি মানবাধিকারকর্মী ড. রিচার্ড এল বেনকিন বলেন, “যারা সরকারে আছেন, তাদের এটা স্বীকার করে নেওয়া প্রয়োজন যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা রয়েছে এবং সেটা প্রতিরোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সব ঘটনাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কি না, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বেনকিন বলেন, “বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তা উগ্রবাদকে আরও উৎসাহিত করে থাকে।।”
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, “অনুষ্ঠানে কেউ বলেছেন এদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেকে সামাজিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতেও দেশ ছেড়ে যান। এটাও বিবেচনায় আসতে পারে।”
আলোচনায় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই।
সিপিবির সহ সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, শোষক শ্রেণি যুগে যুগে তাদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থেই সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রেখেছে।
এশিয়ান এইজের চেয়ারম্যান এম শোয়েব চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে কারা অর্থায়ন করে চলেছে, সেগুলো খুঁজে বের করা দরকার।”
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক আতাউর রহমান, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামিম চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কালিরঞ্জন বর্মন প্রমুখ।