ডাকসু: আদালত অবমাননার মামলা কার্যতালিকা থেকে বাদ

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার মামলার শুনানি না করে কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2018, 12:11 PM
Updated : 30 Oct 2018, 11:29 AM

সোমবার আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে মামলাকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের বাহাসের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ মামলাটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করে তা কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়।

হাই কোর্টের নির্দেশের পরও ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় উপাচার্য, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গত বুধবার আদালত অবমাননার এই মামলা করেন রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর আদালতে তুলে ধরে এ মামলার বিরোধিতা করেন।

মনজিল মোরসেদ তখন আদালত অবমাননার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আদালত মামলা শুনতে অপারগতা জানিয়ে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি রিট হয়েছিল। ওই রিটের রায়ে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে বলেছিল।

“গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন, মার্চের ভিতরে নির্বাচন করার সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। যেহেতু ভিসি বলেছেন, মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হবে। এই বিষয়টিই আমি কোর্টের গোচরে এনেছি।”

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনের প্রশ্নটিই বড়। যে কোনো নির্বাচনের প্রশ্নে, বিশেষ করে ছাত্রদের নির্বাচনের প্রশ্নে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা হলে জাতীয় নির্বাচনের ওপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

“তাই খবরের কাগজে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর দেখে এবং আমার বক্তব্য শুনে আদালত অবমাননার এই আবেদনটি আপাতত তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন আদালত। অবকাশ শেষে কোর্ট খোলার পরে এই আবেদনের শুনানি হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন।”

হাই কোর্টের রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাহবুবে আলম বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হল, এই সময় সমগ্র জাতি তাকিয়ে আছে জাতীয় নির্বাচনের দিকে। এখন জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন না হলে অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হবে না বলে ঢাবি কর্তৃপক্ষ মনে করে। সেজন্যই তারা বলেছেন ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন হবে।’

ঢাকা মিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক দিকে ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্যদিকে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়েছে- এ দুটো বিষয় সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “লিভ টু আপিল সব সময়ই করতে পারে। এটা নির্বাচন বানচালের জন্য না। এটা সময় বাড়ানোরও জন্যও করা হতে পারে। বিষয়টি কন্ট্রাডিক্টরি না। নির্বাচন বন্ধের জন্য কোনো প্রচেষ্টা হলে বলা যেত তারা তামাশা করছেন।”

অন্যদিকে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালত অবমাননার মামলায় রুল জারি হওয়ার আগে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেন না, আইনে সে সুযোগ নেই।

“আর আদালত অবমাননার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল বা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের কেউ বিবাদীদের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন না। এ নিয়ে দুই পক্ষের উত্তপ্ত যুক্তিতর্ক এবং যুক্তিতর্কের যে দৃঢ়তা, সম্ভবত এই কারণে আদালত কিছুটা পিছপা হয়েছেন।”

মনজিল মোরসেদ বলেন, “আদালত প্রথমে বলেছিলেন, রুল জারি করে মার্চের মধ্যেই নির্বাচন করার আদেশ দিলে কেমন হয়। কিন্তু মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারলে বললেন যে, না। রুল জারি করলে সেটা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।

“আমি বলেছিলাম রুল জারি করা হোক। রুল জারি করলে কিছুই হবে না। কিন্তু আদালত সবকিছু শুনে এই মামলাটিকে আউট অব লিস্ট করে দিলেন। এখন আমাদের বিকল্প হল অন্য কোনো কোর্টে যাওয়া “

জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচন করতে গেলে বিশৃঙ্খলার যে আশঙ্কা অ্যাটর্নি জেনারেল প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মনজিল মোরসেদ বলেন, বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে পরিস্থিতির মধ্যে হয়েছে, নিরাপত্তা তারচেয়ে বিঘ্নিত হওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।

“পত্রিকা দেখিয়ে তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) বললেন, নির্বাচন উনারা মার্চের মধ্যে করে ফেলেবেন। তখন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে আপিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেছে, সেই কপিটা আদালতকে দেখিয়ে আমি বললাম, দেশের সর্বোচ্চ আইনজীবীরা সর্বোচ্চ পদে থেকে আদালতকে কীভাবে মিসলিড করছেন। উনারা বলছেন নির্বোচন দিবেন, কিন্তু উনারা যে আপিল করছেন- সে কথাটা আদালতকে বলছেন না।”

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছয় বছর আগের একটি রুল যথাযথ ঘোষণা করে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার দরকার হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে ‘যথাযথ সহযোগিতা’ দিতে বলা হয় রায়ে।

ওই রায়ের পর গত সাত মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কি না- তা জানতে গত ৪ সেপ্টেম্বর উকিল নোটিস পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সে নোটিসের গ্রহণযোগ্য জবাব না পেয়ে বুধবার তিনি আদালত অবমাননার মামলা করেন।

প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে নির্বাচন হয়নি।