গাছের এই সমাহার এখন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরের আয়োজনে; সবুজে সাজানো চত্বরে শ্রাবণের তৃতীয় দিনে শুরু হল জাতীয় বৃক্ষমেলা।
বুধবার সকালে মাসব্যাপী এই মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দিনেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দিয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
এর আগের বছরগুলোতে মেলায় ফল ও ঘর সাজাতে বাহারি গাছ প্রাধান্য পেলেও ঋতুবৈচিত্র্য আর নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের দিকটি মাথায় রেখে এবার মেলায় প্রাধান্য পেয়েছে বিভিন্ন জাতের ফুল।
এছাড়াও বিভিন্ন জাতের ফলের গাছের প্রদর্শনের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলে কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে রয়েছে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ।
প্রতিটি স্টলেই বৃক্ষ পরিচর্যা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য রয়েছেন একজন বিক্রয়কর্মী।
ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
মেলায় যোগ দেওয়া অর্ধ শতাধিক স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, এবার তারা ফুলের গাছকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
কৃষি উপকরণ নার্সারি স্টলের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বর্ষাকাল চলছে। ঋতুর কথা মাথায় রেখে আমরা ফুলের গাছ এনেছি বেশি। বর্ষা ঋতু উপলক্ষে ক্রেতারাও ফুলের গাছ চায় বেশি। তাই এবারের মেলায় ফুলের গাছই বেশি।”
মেলায় ফুলের চারা কিনতে আসা শিহাব উদ্দিন বলেন, “ভাড়া বাসায় এক চিলতে বারান্দাটুকুতে ফুলের চারা হলে বড় ভালো হয়। গন্ধ রয়েছে, এমন ফুলই খুঁজছি। সারা বেলা কাজ শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলে ফুলের গন্ধ মন ভালো করে দেয়।”
ফুলের রাজা গোলাপের জাতে বৈচিত্র্য রয়েছে এবারেও; মেলায় এসেছে তিনশ’র বেশি জাতের গোলাপ। জাতভেদে বিক্রেতারা গোলাপ চারার দাম হাঁকছেন ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
দেশি জাতের জবার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রঙের ২০ ধরনের থাই জবা। দেশি জাতের জবা কেনা যাবে ১০০ থেকে ২৫০ টাকায়; বিদেশি জাতের চারার জন্য খরচ করতে হবে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা।
মেলায় বিভিন্ন জাতের ঝুমকোলতা মিলবে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, আর অপরাজিতার দাম পড়বে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা।
মাধবীলতার চারা বাক্সে নিলে দাম পড়বে ২০০ টাকা, টবে ফুলসহ বড় গাছ নিলে ৪০০০ টাকা। ভারতীয় রায়বেলী কেনা যাবে আকার ও জাতভেদে ২০০ থেকে তিন হাজার টাকায়।
ফুলবিলাসীদের জন্য পাঁচ জাতের রঙ্গন পাওয়া যাচ্ছে মেলায়; নিজের বাগানে এই রঙ্গন পেতে চাইলে গুণতে হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
বিদেশি দুষ্প্রাপ্য ম্যান্ডাভিলার চারা কেনা যাবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়; ড্রামে লাগানো ম্যান্ডালিনার দাম বেশি- দুই হাজার টাকা। ম্যান্ডাভিলা হোয়াইটের ছোট চারার দাম ৫০০ টাকা।
কাঠগোলাপের বড় গাছ মিলবে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।
মেলার প্রথম দিনে বিভিন্ন স্টলে ছিল আফ্রিকান টিউলিপের ছড়াছড়ি। বিক্রেতারা বিভিন্ন জাতের টিউলিপ চারার দাম হাঁকছেন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
স্থলপদ্ম ও জলপদ্মের দেখাও মিলবে মেলায় এসে। স্থলপদ্ম আড়াইশ থেকে তিনশ টাকার মধ্যে মিললেও জলপাত্রসহ জলপদ্মের জন্য গুণতে হবে সাত থেকে আট হাজার টাকা।
বৃক্ষ মেলায় মোচেন্ডা ও অ্যালামোন্ডার বিভিন্ন জাতের দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। লিপস্টিক ফুলের চারার দাম ২৫০ টাকা, অ্যারোমেটিক জুঁইয়ের দাম পড়বে ৫০০ টাকা, আর চেরি ফুলের চারা মিলবে ৭০০ টাকায়।
ছাদবাগানের ফলজ বৃক্ষ
রাজধানীতে ছাদে বাগান চর্চা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌখিন নগর চাষি ও বাগানিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ফলজ বৃক্ষের চাহিদা। এই দিকটি মাথায় রেখে এবার বৃক্ষমেলায় এসেছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলজ বৃক্ষের চারা ও ও কলম গাছ।
আম, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, তেঁতুল, জামরুল, করমচা, লেবুসহ নানা জাতের ফলের গাছের চারা মিলছে বৃক্ষমেলায়। জাতীয় ফল কাঁঠালের চারা বড় ড্রামে কিনলে পড়বে দুই হাজার টাকা, আর ছোট ড্রামে এক হাজার টাকা। কাঁঠালের বারোমাসি জাতের চারার দাম পড়বে ২০০ টাকা।
মেলায় আসা ৩০টি জাতের আমের মধ্যে রয়েছে মহাচনিক, কিং অব চাপাকাত, জাম্বুরা, আম্রপালি, কিউজাই, ব্রুনাই বারোমাসি, ফজলি, তোতাপুরি, পালমার।
দেশি আমের চারা মিলবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, বিদেশি জাতের আমের চারা মিলবে ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।
দেশি টক তেঁতুলের পাশাপাশি মেলায় এসেছে থাইল্যান্ডের মিষ্টি তেঁতুলের চারাও, দাম ৪০০ টাকা। দেশিটির চারার দাম ১০০ টাকা।
পেয়ারার তিনটি জাতের দেখা মিলবে এবারের মেলায়। আপেল পেয়ারার চারা ১৫০ টাকা, ভেরিগেটেড পেয়ারা ৪০০ টাকা, স্বরূপকাঠি পেয়ারার দাম ২০০ টাকা। থাই পেয়ারার চারার দাম দুই হাজার টাকা।
কামরাঙ্গার চারা পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
ডালিমের চারার দাম ১০০ টাকা, আনারের ৩০০ টাকা। জাবাটিকাবার বড় চারা ব্যাগে নিলে ৫০০ টাকা, টবে নিলে ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
থাই জাম্বুরার চারা ব্যাগে নিলে দিতে হবে ৫০০ টাকা, ড্রামে নিলে ৩ হাজার টাকা। এগফ্রুট বা হলুদ সফেদা, ডুরিয়ান, ব্রেডফুট, রামবুটানের চারা এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে মিলবে।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের লিচুর চারা মিলবে ৪০০ টাকার মধ্যে। কাউফলের চারার দাম পড়বে ২০০ টাকা, আতার দাম ১০০ থেকে ৪০০ টাকা, কদবেলের চারার দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
এছাড়া মাল্টা, অ্যাভোকেডো, থাই কালোজাম, পিচফলের চারা কেনা যাবে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
মেলায় আসা বীজহীন কাগজি লেবুর চারা মিলবে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এছাড়াও জাম্বুরা লেবু, বেনানা লেবু, মিষ্টি লেবুও মিলবে এই মেলায়।
সৌখিন বাগানিদের অর্কিড ও পাম
বৃক্ষমেলায় বরাবর বনসাইয়ের আধিপত্য দেখা গেলেও এবার বিভিন্ন স্টলের বিক্রেতারা এনেছেন ক্যাকটাস ও নানা জাতের অর্কিড। রয়েছে বিভিন্ন জাতের বাগান বিলাসও।
ব্র্যাক নার্সারির বিক্রেতারা জানান, অর্কিডের মধ্যে ক্যান্ডোরিয়ামের দাম পড়বে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, অনসেডিয়ামের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, ক্যাটালিয়ার দাম পড়বে ১২০০ থেকে ১৭০০ টাকা, অনথোরিয়ামের দাম পড়বে ২৫০০ টাকা।
দীপ্ত অর্কিডের মার্কেটিং ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, সোনিয়া, রিনাপা হোয়াইট, মিস সিঙ্গাপুর, ইয়েলো এন্নে, অনসিডিয়ামসহ নানা জাতের অর্কিড পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
মোকারা জাতের রবিন রেড, ইয়েলো অ্যানি, ডাইহার্ট রেডের অর্কিড চারা মিলবে ৬০০ টাকায়। নোরা ব্লু অর্কিডের দাম পড়বে ৪০০ টাকা; রেড ইয়েলোর দাম ১২০০ টাকা।
এছাড়া বিভিন্ন জাতের পামের চারা মিলবে ৪০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। ৫০ থেকে ১০০ টাকায় কেনা যাবে মানিপ্ল্যান্টের চারা আর ফার্নের দাম পড়বে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
বিভিন্ন জাতের বাগান বিলাসের কেনা যাবে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
উৎসবে ঘর সাজাতে ক্রিসমাস ট্রি, মিরান্ডা, বাঁশপাতা, কালারিং কচুর দাম পড়বে সাড়ে তিনশ থেকে ছয় হাজার টাকা।
ঔষধি বৃক্ষ
বৃক্ষমেলায় তুলনামূলক হাতের নাগালেই রয়েছে ঔষধি গাছের দাম; ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের স্টলে মিলবে শতমূলী, নিশিন্দা, নাগমণি, ফণিমনসা, হাড়জোড়া, চন্দন, মুক্তাঝুড়ি, পাথরকুচি, পুদিনা, অর্জুন, সালাদ কচু, ঘৃতকুমারী, রক্তচন্দন, নাগেশ্বর।
ঔষধি গাছের চারা কিনতে এসে ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান বলেন, “প্রতিবার মেলা থেকে ফুল ও ফলজ বৃক্ষের চারা কিনি। এবার কিছু ঔষধি গাছও কিনে নিলাম। সবগুলো ঢাকার বাড়িতে রাখতে পারব না। এর বেশিরভাগ চলে যাবে গ্রামে।”