তিন সিটি নির্বাচন: ‘খুলনা-গাজীপুরের মতোই’ নিরাপত্তা পরিকল্পনা

সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গেল দুই সিটি করপোরেশনের মতোই নিরাপত্তা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2018, 09:01 PM
Updated : 11 July 2018, 03:51 PM

বৃহস্পতিবার এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারেরর সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন-পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ছক চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই সিটি নির্বাচনের মতোই আগামী তিন সিটির কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে।”

মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩০ জুলাই তিন সিটিতে ভোট হবে। মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা।

দলীয় প্রতীকে প্রথমবার ভোট হচ্ছে এসব সিটি করপোরেশনে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের এ ভোটে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল অংশ নিচ্ছে।

খুলনা ও গাজীপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আসন্ন তিন সিটিতে কোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি ও অনিয়মের যাতে পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হবে বলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, তিন সিটিতে দলীয় প্রতীকে প্রথম সিটি ভোট হওয়ায় এখানে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বেশি হারে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চার দিন (২৮ জুলাই-৩১ জুলাই) ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন ভবন

যুগ্মসচিব স্বাক্ষরিত প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বলা হয়, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন রাখা যেতে পারে।

এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের টিম এবং বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে।

রাজশাহীতে ১৫ প্লাটুন, বরিশালে ১৫ প্লাটুন ও সিলেটে ১৪ প্লাটুন বিজিবি রাখা হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের টিম ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।

প্রচারণার শুরু থেকে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী হাকিম মাঠে থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামার পর তাদের নেতৃত্বেও থাকবেন নির্বাহী হাকিম। এ সময় তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক হাকিম নিয়োগ করবে ইসি।

খুলনা ও গাজীপুর সিটিতেও একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল ইসি। এ দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। দুই জায়গায়ই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলছেন, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে একই রকম নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

খুলনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের প্রার্থীর সমর্থকদের গ্রেপ্তার-হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। ইসির কাছে প্রতিকারও চেয়েছিল দলটি।

এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাজীপুরেও এমন নির্দেশনা দিয়েছি। এখন তিন সিটিতে দেওয়া হবে, যাতে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিটি এলাকার কোনো বাসিন্দা বা ভোটারকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা না হয়। তবে ওয়ারেন্ট থাকলে তা ভিন্ন বিষয়।”

তিন সিটির প্রার্থী

বরিশাল

সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্: (আওয়ামী লীগ) নৌকা

মো. মজিবর রহমান সরওয়ার: (বিএনপি) ধানের শীষ

আবুল কালাম আজাদ: (সিপিবি) কাস্তে       

ওবাইদুর রহমান (মাহাবুব): (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) হাতপাখা     

মনীষা চক্রবর্ত্তী: (বাসদ) মই  

মো. ইকবাল হোসেন: (জাতীয় পার্টি) লাঙ্গল  

রাজশাহী

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন): (আওয়ামী লীগ) নৌকা 

মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন: (বিএনপি) ধানের শীষ

মো. হাবিবুর রহমান: (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) কাঁঠাল       

মো. মুরাদ মোর্শেদ: (স্বতন্ত্র) হাতি    

মো. শফিকুল ইসলাম: (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) হাত পাখা   

সিলেট

বদর উদ্দীন আহম্মদ (কামরান): (আওয়ামী লীগ) নৌকা

আরিফুল হক চৌধুরী: (বিএনপি) ধানের শীষ 

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের: (স্বতন্ত্র) টেবিল ঘড়ি      

ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান: (ইসলামী আন্দোলন বাংরাদেশ) হাতপাখা

মো. আবু জাফর: (বাসদ) মই

মো. এহছানুল হক তাহের: (স্বতন্ত্র) হরিণ    

মো. বদরুজ্জামান সেলিম: (স্বতন্ত্র) বাস

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী সংখ্যা

সিটি

মেয়র প্রার্থী

সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী

সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী

মোট

রাজশাহী

৫২

১৬০

২১৭

বরিশাল

৩৫

৯৪

১৩৫

সিলেট

৬৩

১২৭

১৯৬

ভোটার ও ভোট তথ্য

# রাজশাহী: ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন।

      সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোটকেন্দ্র ১৩৮ ও ভোটকক্ষ ১০২৬টি।

# বরিশাল: ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন।

      সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোটকেন্দ্র ১২৩ ও ভোটকক্ষ ৭৫০টি।

# সিলেট: ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন।

      সাধারণ ওয়ার্ড ২৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। ভোটকেন্দ্র ১৩৪ ও ভোটকক্ষ ৯২৬টি।

# রিটার্নিং অফিসার: রাজশাহীতে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম; বরিশালে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান এবং সিলেটে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান।

তাদের সঙ্গে রাজশাহী ও বরিশালে ১০ জন করে এবং সিলেটে নয়জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন।

এছাড়া সহায়ক কর্মকর্তা রয়েছেন রাজশাহীতে ১২ জন, বরিশালে ১২ জন এবং সিলেটে ১১ জন।

# ইভিএম: মঙ্গলবার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, বরিশালে ১০টি কেন্দ্রে এবং সিলেট ও রাজশাহীতে দুটি করে কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।