গাজীপুরের ভোটে কী ঘটেছে, খুঁজছেন মাহবুব তালুকদার

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখছেন মাহবুব তালুকদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2018, 05:07 PM
Updated : 3 July 2018, 05:52 PM

এ মাসে অনুষ্ঠেয় সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের এই উদ্যোগ বলে এই নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন।

মাহবুব তালুকদার মঙ্গলবার ইসিতে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সিইসি আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। ২০ ভাগের কম ও ৮০ ভাগের বেশি ভোট কেন পড়ল? মিডিয়ায় যে বিষয় এসেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের গড় হার ছিল ৫৮ শতাংশ। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, এর মধ্যে কোনো কোনো কেন্দ্রে ২০ ভাগের কম ভোট পড়ে, কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৮০ ভাগের বেশি।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, গাজীপুরে ভোটে ব্যাপক কারচুপি করে তাদের মেয়র প্রার্থীকে হারানো হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে নয়টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছিল বলে সেগুলোতে ভোট স্থগিত করা হয়। বাকি কেন্দ্রগুলোতে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা (ফাইল ছবি)

জাতীয় নির্বাচনের বছর দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে না পারলে বর্তমান ইসির প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে বলে পর্যবেক্ষকরা সর্তক করে আসছেন।

এই ইসির অধীনে আগের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু মনে করলেও খুলনা থেকে শুরু করে গাজীপুরে অনিয়ম ক্রমাগত বাড়ছে বলে ভোট পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ।

এই প্রেক্ষাপটে গাজীপুরের ভোটে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং তিনি দায়িত্ব দিলেন তার সেই সহকর্মীকে, গত বছর ইসি গঠনের সময় যার নাম বিএনপি থেকে প্রস্তাব এসেছিল বলে তখন জানানো হয়েছিল।

গাজীপুরে মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ কেন্দ্রে মেয়র পদে এরকম সিল মারা ব্যালট সরবরাহ করার অভিযোগ ছিল

সাবেক আমলা এবং সাহিত্যিক মাহবুব তালুকদার গাজীপুর নিয়ে তার কাজের ধরন ব্যাখ্যা করে বলেন, “রিটার্নিং অফিসারকে সময় দিয়েছি। আশা করছি, ১০ দিনের মধ্যে আমি একটা চিত্র পাব।... পরে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।”

খুলনা ও গাজীপুরের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

“খুলনা-গাজীপুর সিটিতে যে সব ভুল-ভ্রান্তি কিংবা যে সব অনিয়ম ঘটেছে, আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই দিকে আমরা অবশ্যই দৃষ্টি রাখব। আমি আশাবাদী, গেল দুটি নির্বাচনের সঙ্গে পরবর্তী তিন সিটি নির্বাচনের তুলনা হবে না। আমরা আশা করব তিন সিটি নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য হবে।”

মাহবুব তালুকদার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাদের আন্তরিকতার কথা তুলে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচন চান বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। এক্ষেত্রে আমরা কেন তার কথা মেনে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করব না? কেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করব, আমার বুঝে আসে না।”

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার (ফাইল ছবি)

“আমাদের সময়ে একবার সংসদ নির্বাচন হবে। আমাদের মান সম্মান, সব কিছু নির্ভর করে জাতীয় নির্বাচনের উপরে।..শপথের বাইরে যাব না; সংবিধানের বাইরে যাব না। শপথ রক্ষা করতে পারাই আমাদের আত্ম মর্যাদা সংরক্ষণ করা,” বলেন তিনি।

পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। একটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে মাহবুব তালুকদারের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার খবরও এর আগে প্রকাশ পায়।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনাটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় থাকলে আগামীতে কোনো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া লাগবে না বলে মনে করেন তিনি।

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মাহবুব তালুকদার বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থাপনাটা যদি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়। তাহলে আমাকে নোট অব ডিসেন্ট দিতে হবে না। আর যদি সেটা আমার বিবেক অনুযায়ী সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় না হয়, তাহলে একটা কেন, ১০টা নোট অব ডিসেন্ট দেব।

“আমি এমন যোদ্ধা, যে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যেতে রাজি আছি। কিন্তু যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে আত্মরক্ষা করে বেঁচে থাকার কোনো কারণ তো আমি বুঝি না।”