ওয়েজবোর্ড আটকাতে নোয়াবের রিটের পর হাই কোর্টের রুল

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত নবম মজুরি বোর্ড (ওয়েজ বোর্ড) কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 08:57 AM
Updated : 2 July 2018, 01:56 PM

নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের করা একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রুল জারি করে।

রিটকারী পক্ষ ওয়েজ বোর্ডের কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাইলেও আদালত তা নাকচ করে দেয়। রোববার এ আদেশ দেওয়া হলেও সাংবাদিকরা সেই তথ্য জানতে পারেন সোমবার।  

আদালত বলেছে, তথ্য সচিব, শ্রম সচিব ও ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিমকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে। আর আদালতের এই নির্দেশনা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিবাদীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম ইউসুফ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকে নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এই দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে তারা।

এই প্রেক্ষাপটে চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের এই ওয়েজবোর্ড গঠন করে আদেশ জারি করে তথ্য মন্ত্রণালয়।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গত এপ্রিলে বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের সব প্রস্তুতি শেষ করা হবে। তার আগে মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষণার জন্যও সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। 

কিন্তু এর মধ্যেই ওয়েজ বোর্ডের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট করেন নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমান।

তার আইনজীবী ইউসুফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে রুলস অব বিজনেস করে দিয়েছেন, সে অনুযায়ী সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড গঠন করার ক্ষমতা শ্রম মন্ত্রণালয়ের। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েজবোর্ড গঠনের এখতিয়ার নাই।

“তাছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো এনফোর্সমেন্ট মেকানিজম নাই (প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো) যে, তারা ওয়েজবোর্ড কার্যকরের জন্য কাজ করতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সে পরিকাঠামো আছে। যেমন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রায় পাঁচশ পরিদর্শক আছে সারা দেশে।

“ফলে শ্রম মন্ত্রণালয় এটা খুব সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। আর তথ্য মন্ত্রণালয় ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দিয়েই খালাস। এর ফলে হাতেগোণা কয়েকটি পত্রিকা ছাড়া ওয়েজবোর্ডের বাস্তবায়ন হয় না। এসব কারণ উল্লেখ করে আমাদের রিটটি করা হয়েছে।”

সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন গড়ে তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

এরপর মূল্যস্ফীতি ও বাজার দর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সাংবাদকর্মীদের দাবির মুখে সরকার ২০১৬ সালের অক্টোবরে নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে প্রতিনিধির নাম চায়। কিন্তু সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব প্রতিনিধির নাম না দেওয়ায় ওয়েজবোর্ড গঠন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয় বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য।

সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের প্রতিক্রিয়া