অচেনা পত্রিকাগুলোরও এত প্রচার সংখ্যা!

সংবাদপত্রের নাম আমার সংবাদ, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংবাদপত্রের স্টলে গিয়ে এটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদপত্র বিপণনকারী আবদুল হামিদসহ কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারাও নাম শোনেননি বলে জানান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2017, 08:09 PM
Updated : 9 August 2017, 03:00 PM

অথচ সরকারি তথ্য বলছে, আমার সংবাদের প্রচার সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ২০০। এই সংখ্যার কথা শুনে অনেক পাঠকেরই চোখ কপালে উঠে।

সংবাদপত্র নিয়ে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায় আমার সংবাদের এত সংখ্যক প্রচার সংখ্যার তথ্য।

আমার সংবাদের মতোই গণকণ্ঠের প্রচার সংখ্যা ৫১ হাজার ১০০, ঢাকা প্রতিদিনের ৫০ হাজার, নব চেতনার ৫০ হাজার, দৈনিক বাংলার ৪০ হাজার, খবরের ৪০ হাজার প্রচার সংখ্যার তথ্য আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই দপ্তরের হিসাবে।

এই তালিকারই সবার শীর্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন; তাদের প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০। তারপরে স্থান প্রথম আলোর, প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০। 

তালিকায় তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে কালের কণ্ঠ ও যুগান্তর; যাদের প্রচার একেবারে এক, একটিও বেশি না, একটিও কম না; ২ লাখ ৯০ হাজার ২০০। ইত্তেফাক জনকণ্ঠেরও প্রচার সংখ্যাও সমান, ২ লাখ ৪০ হাজার।

আমার সংবাদের প্রচার সংখ্যা নিয়ে যেমন সন্দেহ উঠেছে, তেমনি দুটি পত্রিকার প্রচার সংখ্যার একেবারে এক হওয়াও সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়।

ইংরেজি দৈনিকগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা ডেইলি স্টারের প্রচার সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৮১৪। এই তালিকায়ও নিউ এইজ ও ডেইলি অবজারভারের প্রচার সংখ্যা একদম এক, ৩৮ হাজার ৫০০।

তালিকার একেবারে উপর থেকে একেবারে নিচ পর্যন্ত সব পত্রিকার প্রচার সংখ্যা নিয়েই একই রকম গড়বড় রয়েছে বলে অধিদপ্তরেরই একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেন; অথচ এর ভিত্তিতেই পত্রিকাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে।

ইংরেজি দৈনিকগুলোর তালিকায়ও ডেইলি সান ও এশিয়ান এইজ এবং নিউ এইজ ও ডেইলি অবজারভারের সমান প্রচার সংখ্যা বেশ কৌতূহলের

 

সংবাদপত্র শিল্পের ভেতরের খবর রাখেন এমন এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সময় শীর্ষে থাকা পুরনো একটি বাংলা দৈনিকের সার্কুলেশন এখন ১৭ হাজার। অথচ ডিএফপির তালিকায় তাদের প্রচার সংখ্যাও আড়াই লাখের কাছাকাছি।”

দুই লাখের বেশি প্রচার সংখ্যা হিসাবে এই তালিকায় উল্লেখিত আরেকটি দৈনিকের প্রকৃত প্রচার সংখ্যা ২৩ হাজার বলে তিনি জানান।

ইন্টারনেটের প্রসারের এই সময়ে ছাপানো সংবাদপত্র যখন অবলুপ্তির পথে হাঁটছে বলে বলা হচ্ছে, তখন সরকারি বিজ্ঞাপনদাতা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সাময়িকীর সর্বশেষ প্রচার সংখ্যা নিয়ে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

এই সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এত সংখ্যক সংবাদপত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, “১৫টি হবে কি না আমার সন্দেহ আছে, ২০টি হতে পারে বড়জোড়। এই যে পাঁচশ কতটা কী আছে খবরের কাগজ, অল বোগাস… কাগজ পায়, এটা পায়, ওটা পায়।”

তালিকার ১৭ ক্রমিকে আমার সংবাদ, প্রচার সংখ্যা দেওয়া আছে ১ লাখ ১৫ হাজার; তালিকার উপরের দিকে কালের কণ্ঠ ও যুগান্তর এবং ইত্তেফাক ও জনকণ্ঠের প্রচার সংখ্যা একেবারে সমান

 

ওই তালিকায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২০৩টি বলা হয়েছে। সারাদেশের মিলিয়ে দৈনিক পত্রিকার এই সংখ্যা ৪৭৯টি। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক মিলিয়ে ঢাকা থেকে মোট ৩০৪টি পত্রিকা। তালিকাভুক্ত মোট গণমাধ্যমের সংখ্যা ৬৩৪টি।

এ সব পত্রিকা বিভিন্ন মূল্যে সরকার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। তালিকায় ঢাকার ৪৪টি বাংলা দৈনিক, ১৫টি ইংরেজি দৈনিক, মফস্বলের ৩২টি বাংলা দৈনিক ৮ম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করেছে বলে দাবি করা হয়।

সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুহিত।

তালিকায় ‘ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা সাংবাদিকদের অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে বলেও উল্লেখ করা হয়।

অষ্টম বেতন কাঠামো অনুসরণ করলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ক শ্রেণীর একটি সংবাদপত্রের একজন স্টাফ রিপোর্টারের পূর্ণকালীন চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর বেতন ও সব ভাতা মিলিয়ে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।

নওরোজ, খবরপত্র, ঢাকার ডাক, বাংলার দূত, সোনালী খবর, প্রথম কথা প্রভৃতি বাংলা দৈনিকও ৮ম বেতন কাঠামো অনুসরণ করে কর্মীদের বেতন দেয় বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়।

তালিকায় অষ্টম রোয়েদাদ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করা একটি দৈনিকে কাজ করা এক সাংবাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অফিস অষ্টম ওয়েজ বোর্ড তো বাস্তবায়ন করেইনি। যে বেতন ধরা হয়েছে, সেটাও অনেকের ক্ষেত্রে বছরের বেশি সময় বাকি পড়ে আছে।”