নোয়াবের পদক্ষেপ ‘অনৈতিক’

সংবাদকর্মীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত ওয়েজ বোর্ডের কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর মালিকদের সংগঠন নোয়াবের আদালতে যাওয়াকে ‘অনৈতিক’ বলছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 01:55 PM
Updated : 2 July 2018, 05:46 PM

এর আগে প্রতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওয়েজ বোর্ডের ঘোষণা দেওয়া হলেও এবার তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছে নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।

নোয়াব সভাপতি দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের করা ওই আবেদনে হাই কোর্ট রোববার রুল জারি করে, যা সোমবার প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানান সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই। তবে নোয়াব যে কাজটি করেছে, এটা অনৈতিক।

“তাদের (নোয়াব) প্রতিনিধি ছিল নবম ওয়েজ বোর্ডে। তারা তিনটা বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন। মহার্ঘভাতা ঘোষণার পর নোয়াবের আদালতের যাওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।”

বিএফইউজে নেতা ওমর ফারুক নবম ওয়েজ বোর্ডে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলও গঠিত ওয়েজ বোর্ডে নোয়াবের অংশ নিয়েও এখন ভিন্ন কথা বলার বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয় এবং তাদের আমন্ত্রণে নোয়াব তাদের প্রতিনিধিদের নামও দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা তিনটি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

“আমরা মনে করি, নোয়াবের আপত্তি থাকলে তারা নাম পাঠাতেন না, বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের আপত্তি জানাতেন। এই পর্যায়ে নোয়াবের এই উদ্যোগে কতটুকু আইনসম্মত হয়েছে, তা আদালতই বিবেচনা করবেন বলে আমি মনে করি।”

২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকে নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো।

সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের কর্মসূচির পর গঠিত হয়েছিল নবম ওয়েজ বোর্ড (ফাইল ছবি)

এই প্রেক্ষাপটে চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের ওয়েজবোর্ড গঠন করে তথ্য মন্ত্রণালয়। মালিকদের সংগঠন নোয়াব তাদের প্রতিনিধির নাম দিতে দেরি করায় ওয়েজবোর্ড গঠনও বিলম্বিত হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল।

সব পেরিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের প্রতিশ্রুতি যখন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছ থেকে আসে, তার মধ্যে ওয়েজ বোর্ডের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট আবেদন করেন মতিউর রহমান।

তিনি ওয়েজ বোর্ডের কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চাইলেও আদালত তাতে সাড়া দেয়নি। তবে নবম মজুরি বোর্ড (ওয়েজ বোর্ড) কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে।

বিএফইউজের আরেক অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীও এই পর্যায়ে এসে নোয়াবের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে তিনি গঠিত ওয়েজ বোর্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একতরফা ওয়েজ বোর্ড গঠন হয়েছে, তারপরও নোয়াবের উচিৎ ছিল বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা।”

গঠিত ওয়েজ বোর্ড সংবাদ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়নি দাবি করে রুহুল আমিন গাজী ওয়েজ বোর্ড পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

বক্তব্য মেলেনি নোয়াব সভাপতির

নোয়াবের উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের সমালোচনার মুখে থাকা প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের কোনো বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

সোমবার সন্ধ্যার পর মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে তিনবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মতিউর রহমান (ফাইল ছবি)

পরে প্রথম আলো সম্পাদকের বক্তব্য পেতে সংবাদপত্রটির বার্তা সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্পাদক বাইরে রয়েছেন, অফিসে এলে তার সঙ্গে  কথা বলে জানাবেন।

নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমানের  আইনজীবী ইউসুফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে রুলস অব বিজনেস করে দিয়েছেন, সে অনুযায়ী সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড গঠন করার ক্ষমতা শ্রম মন্ত্রণালয়ের। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েজবোর্ড গঠনের এখতিয়ার নাই।

“তাছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো এনফোর্সমেন্ট মেকানিজম নাই (প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো) যে, তারা ওয়েজবোর্ড কার্যকরের জন্য কাজ করতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সে পরিকাঠামো আছে। যেমন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রায় পাঁচশ পরিদর্শক আছে সারা দেশে।

“ফলে শ্রম মন্ত্রণালয় এটা খুব সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। আর তথ্য মন্ত্রণালয় ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দিয়েই খালাস। এর ফলে হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা ছাড়া ওয়েজবোর্ডের বাস্তবায়ন হয় না। এসব কারণ উল্লেখ করে আমাদের রিটটি করা হয়েছে।”